আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 27

বিথীঃ এই যে মিস্টার এমন করে কি দেখছেন?
বিধানঃ আমার ওয়ান এন্ড কিউট বউকে! (মুচকি হেসে)
বিথীঃ আপনি না ঘুমাবেন! তাহলে এমনক বাঁদরামি করছেন কেনো?
বিধানঃ তো এতো রোমান্টিক শায়েরি শুনলে কি কোনো ছেলের ঘুম কাজ করে তখন তো……
বিথীঃ উফফফ! এতো বাজে প্যাঁচাল কি করে করেন?
বিধানঃ সিম্পেল তোমকে দেখেই এসে পড়ে! (চোখ টিপ দিয়ে)
বিথীঃ উফফফ! ঘুমান তো!
বিধানঃ উফফফ! ঘুম পাড়িয়ে দাও তো!
বিথীঃ ধুররর! আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আপনি দয়া করে ঘুমান!
বিধানঃ নাহ সাথে গানও গাইতে হবে! নাহলে নো ঘুম অনলি…… (বলে ডেভিল স্মাইল দিলো)
বিথীঃ না! না! আমি গান গাইছি তো তবে কি করে গাইবো আমি তো গান পারি না!
বিধানঃ তুমি কি গাইবে নাকি……
বিথীঃ নাহ গাচ্ছি তো,
বকুলের মালা শুকাবে,
রেখে দিবো তার সুরোভি।
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারই ছবি
আমি বিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি বা দূরে রও
মনে রেখো আমি ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
,
,
,
বিধান চোখ বন্ধ করে বিথীর গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমালো টেরই পায়নি। বিথী গান শেষ করে বিধানের দিকে তাকিয়ে দেখে বিধান ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে তাই নিজেও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। তাদের ঘুম ভাঙলো আশা আর আয়ানের ডাকে।
ঠক ঠক!
আশঃ বিথী! বিধান!
আয়ানঃ কি করছো আস্তে ডাকে ওরা ঘুমাইছে মনে হয়!
আশাঃ ধুররর শালা! এখন আবার কিসের ঘুম!
আয়ানঃ ওই আমি তোর কোনকালের শালা লাগি! ওরা তো অন্য কোনো কাজেও বিজি হতে পারে। তোর মতো নাকি আমার শালি!
আশাঃ আমার মতো মানে? কি কইতে চাস তুই!
আয়ানঃ আই মিন তোর মতো নিরামিষ নাকি ওরা! নিজে তো রোমেন্স করতে দেস না অন্য কেউ করলেও চুলকানি ওঠেনি!
আশাঃ শালা কি কইলি!
এদিকে বিথীর ঘুম ভেঙে যায় এদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে। বিথী তো এদের কথায় লজ্জায় লাল-নীল হয়ে যাচ্ছে। বিধানের দিকে তাকিয়ে দেখে বিধান এখন নিষ্পাপ বাবুর মতো ঘুমাচ্ছে।
বিথীঃ নাহ এই রাক্ষস জাগার আগেই আমার এদের থামাতে হবে। এরা যেই নির্লজ্জ এই রাক্ষসের সামনেই শুরু হবে পরে আমি লজ্জা পামু!
বিথী বিধানকে আলতো করে বুক থেলে সরিয়ে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। তারপর মুচকি হেসে বিধানের কপালে আলতো ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে জামা ঠিক করে দরজা খুললো।
আশাঃ শালা তোর লগে বিয়া কইরা আমার কপালডা পুড়ছি। বেস্টফ্রেন্ডই ভালা ছিলি!
আয়ানঃ কপাল তো আমার পুড়ছে তোর বান্ধুবী রিতারে বিয়া করলে সারাদিন বউয়ের আদর নিতি!
আশাঃ আমিও তোর চাচাতো ভাই রায়হানরে বিয়া করলে শান্তিতে থাকতাম!
আয়ানঃ কি কইলি কুত্তা!
,
,
,
বিথী যে দরজা খুলে দাঁড়ায় আছে এতে তাদের দুইজনের কোনো ধ্যান নেই।
বিথীঃ আল্লাহ! এগুলোরে বিয়া করতে কে বলছিলো! (মনে মনে)
হঠাৎ আয়ানের নজর পড়লো বিথীর উপর। আয়ান তাই বিথীর হাত ধরে রুমের বাইরে এনে দাঁড় করালো।
আয়ানঃ বিথী তুমি তো আসছো! দেখো তোমার বোন কেমম অসহায় বাচ্চাটার উপর অত্যাচার করছে!
আশাঃ শালা তুই বাচ্চা? নিজেই এক বাচ্চার বাপ!
বিথীঃ চুপপ! কি জন্য আসছো তা বলো তো!
আশাঃ তুই আমাকে ধমক দিতে পারলি?
বিথীঃ উফফফ আশাপু মেলোড্রামা অফ করো তো। জিজু তুমি বলো।
আয়ানঃ সাতটা বাজে তো রেডি হয়ে ছাদে আসার জন্য ডাকতে আসছি!
বিথীঃ ওহ আমরা আসছি তোমরা যাও আর খবরদার এখানে আবার স্টার্ট হবে না আর।
বিথী রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো এবং আশা ও আয়ান ঝগড়া করতে করতে চলে গেলো। বিথী বিধানকে উঠাতে লাগলো।
বিথিঃ এই যে শুনছেন! উঠেন সাতটা বাজে!
বিধানঃ উমমম!
বিথীঃ উমমম না করে উঠে রেডি হন!
বিধান বিথীর ডাকে উঠে বসলো। তারপর বিথীকে কোলে বসিয়ে গালে চুমু খেলো।
বিধানঃ এখনই যেতে হবে? ( কানে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে)
বিথীঃ হুম। ( ধীর কণ্ঠে)
বিধানঃ আচ্ছা! আমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসি।
বলে বিধান চলে গেলো ওয়াসরুমে আর এদিকে বিথী কি পড়বে তা ডিসাইড করতে ব্যবসা হয়ে পড়লো। বিধান কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে একটা ব্লাক টিশার্ট, রেড জ্যাকেট ও ব্লাক গ্যাবার্ডিং।
বিধানঃ আমার শেষ তুমি যাও!
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ কি হলো যাও!
বিথীঃ যাবো তো ঠিক আছে কি পড়বো?
বিধানঃ আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।
বলে বিধান একটা ব্লাল ও রেড মিক্স সিল্ক জরজেট শাড়ি দিলো বিথীকে। বিথী মুচকি হেসে ওয়াসরুমে চলে গেলো। বিথী কাপড় চেঞ্জ করে এসে রেডি হয়ে বিধানের সাথে ছাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো। ছাদে যেয়ে দেখলো একপাশে বারবিকিউ ও গ্রীল চিকেন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেকপাশে দোলনা ও সাউন্ড বক্সেস রাখা এবং মাঝে আগুন জ্বালিয়ে চার পাশে গোল হয়ে মাটিতে বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরিশা ও দিপ্ত বারবিকিউ করতে ব্যস্ত আর আশা ও আয়ান ঝগড়া করতে করতে লাইটিং ঠিক করছে। আশা খেয়াল করলো বিধান-বিথীকে তাই তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
আশাঃ কিরে এতক্ষণ লাগে আসতে?
বিধানঃ আরে আশাপু আমার দোষ নাই তোমার বোন আসতেই চায় না। আমার কোলে উঠেই বসে থাকে। ওর রোমেন্সের জন্যই লেট হলো।
আশাঃ কিরে বিথু আগে তো বলতি বিয়ে করবো না আর এখন জামাই পায়া ছাড়তে চাস না তাকে! ( দাঁত কেলিয়ে)
বলে নিথীর তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিলো এবং বিথী চোখ রাঙিয়ে তাকালো।
বিথীঃ কি যাতা বলছেন! আমি কখন এসব করলাম! ( রেগে)
দিপ্ত এগিয়ে আসলো বিথী, বিধান ও আশাকে তর্ক করতে দেখে। দিপ্ত এসে বিথীর মাথায় টোকা দিলো দুষ্টামি করে।
বিথীঃ উফফফ দিপ্ত!
দিপ্তঃ কিরে পেত্নি চেতোস কেন! কি হইছে আশাপু?
আশা ওকে এতোক্ষণে যা যা হয়েছে খুলে বললে দিপ্তের এমন অবস্থা হয় যেনো সে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে। এর মধ্যেই আয়ান এসে সবাইকে যার যার জায়গায় বসতে বলে।
আয়ানঃ সব রেডি! এখন সবাই যার যার আসন গ্রহণ করেন।
আয়ানের পাশে আশা তার পাশে আরিশা ও দিপ্ত। তারপর বিধান ও বিথীর কোলে আয়ান ও আরিশার ছোট্ট রাজকন্যা।
আয়াশাঃ মাম্মাম শুলো কলো অনুথান!
আশাঃ আম্মু ওটা অনুষ্ঠান!
আয়াশাঃ ধুররর! যা বলছি তা করো!
আয়াশার কথায় সবাই হেসে দিলো। ঠিক তখনই নীলাভ্র ছাদে এসে বিথীর পাশে বসে পড়লো। এটা দেখে বিধাম রেগে গেলোও নিজেকে ঠিক রাখে।
,
,
,
আয়ানঃ শোনো সবাই আমরা প্রথমে পাসিং দ্য পিলো খেলবো।
আশাঃ না! না! ট্রুথ এন্ড ডেয়ার! আমি বোতল আনছি!
দিপ্তঃ হ্যাঁ ট্রুথ এন্ড ডেয়ারই খেলবো।
আয়ানঃ ওকেহ! ( ভেঙচি কেটে)
বোতল ঘুড়ানো হলে প্রথমে আরিশার দিকে আসে।
আরিশাঃ আ-আমি!
দিপ্তঃ হুমম তুমি। আমি দিবো বলো কিহ নিবে?
আরিশাঃ ট্রুথ!
দিপ্তঃ তোর লাইফের সবচেয়ে ইম্বারেসিং ঘটনা বল! আর তাড়াতাড়ি না বললে কিন্তু ডেয়ার দিবো তা কেমন দিবো তুই কিন্তু জানিস!
আরিশাঃ আমি একবার চুয়িং গাম খেতে খেতে নিজের চুলে লাগায় ফেলেছিলাম। পরে টেঁকো হতে হইছে।
আরিশার ঘটনায় সবাই হেসে দিলো। এরপর আসলো আয়ানের নাম। আয়ানকে আশা ডেয়ার দিলো পিংক লিপস গানে নাচতে। আয়ান বেচারার আর কি করার নাচলো। তা দেখে সবাই হাসতে লাগলো। দিপ্ত ডেয়ার নিলে আরিশা দিপ্তকে মুরগি হয়ে মুরগির মতো আওয়াজ করতে বলে। দিপ্ত প্রথমে ডেয়ার পূরণ করতে না চাইলেও সবার জোড়াজুরিতে করে আরিশা সেটা ভিডিও করে রেখে দেয়। এরপর আসে বিথীর সুযোগ।
বিধানঃ তো বলো বউ ডেয়ার না ট্রুথ?
বিথীঃ ডেয়ার।
দিপ্তঃ ভাইয়া টাফ কোনো টাস্ক দাও!
বিধানঃ তো বউ ছোট্ট একটা কাজ করে। শো মি আ ডান্স পারফর্মেন্স প্লিজ।
বিথীঃ ন-না আমি এটা করতে পারবো না!
বিধানঃ দ্যান বউ সোনা ইউ হ্যাভ টু ডু দ্য পানিশমেন্ট টাস্ক! কিস মি দেন!
বিথীঃ কিহহহ।
বিধানঃ হুমম বউ! আমার অনেকদিনের সখ বউয়ের নাচ দেখবো কিন্তু তা তো পসিব্যাল না। সো আজকেই দেখা যাক! তুমি বলো কোনটা করবা?
বিথীঃ নাচবো! ( মুখ গোমরা করে)
দিপ্ত বিথীর কথায় সাউন্ড বক্সে গান ছাড়লো। বিথী দোলনার সামনে যেয়ে পিছম ঘুরে দাঁড়ালো।
নেয়নো ওয়ালে ছেড়া মনকা পেয়ালা
ছাড়কায়ি মধুশালা
মেরা চেন, বেন, নেয়ন আপনে সাথ লেগায়া,
নেয়নো বালেনে……….
বিথী এই গানের সাথে তাল মিলিয়ে চোখবন্ধ করে নাচছিলো এবং ওর মুখোভঙ্গীমায় মনে হচ্ছিলো সে নিজেই গানের প্রতিটা লিরিক্সকে মন থেকে অনুভব করছে। বিথীর নাচ মুগ্ধ নজরে চেয়ে দেখছিলো বিধান। হঠাৎ ও খেয়াল করে বিথী ছাদের একদম কর্নারে চলে যাচ্ছে যেখামে বাউন্ডারি অনেক ছোট যার কারণে বিথী পড়ে যেতে পারে। তাই ও দৌড়ে উঠে বিথীকে কর্ণার থেকে এক টানে নিজের দিকে নিয়ে আসলো যার কারণে বিথী ওর বুকে গিয়ে পড়লো। সবাই কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলো বিধানের এমন করার কারণ। বিধান বিথীকে বুক থেকে উঠিয়ে পাগলের মতো চেক করতে লাগলো ওর কোথাও লেগেছে কিনা।
ঠাসসস!
বিধানঃ মন কোথায় থাকে! তোমার কিছু হয়ে গেলো আমার কি হতো একবার ভাবো! ( বিথীকে চর মেরে দুই কাধ ধরে ঝাঁকিয়ে)
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিথী মাথা নিচু করে কাঁদছে তবে বিথী এই শাসনে অদ্ভুত রকমের শান্তি অনুভব করছে। কেউ কিছু বলছে না কারণ স্বামী-স্ত্রীর পার্সোনাল ব্যাপার তারাই মিট করে নিক। হঠাৎ নীলাভ্র এসে বিথীকে এক টানে বিধান থেকে ছাড়িয়ে আনে।
নীলাভ্রঃ বিধান করছো কি! বিথী কি ইচ্ছে করে এমন করেছে নাকি যে তুমি ওকে চর মারলে। কেমন হাজব্যান্ড তুমি! ( রেগে)
বিধান নীলাভ্রের কথায় অনেক অপমান বোধ করে। কিন্তু যেই না নীলাভ্রকে কিছু বলতে নিবে বিথী এমন কিছু বলে যাতে ও অবাকের সপ্তম পর্যায়ে চলে যায়।
বিথীঃ জাস্ট শাট আপ নীল ভাই! বিধান ওয়ার্ল্ডের বেস্ট হাজব্যান্ড বুঝলেন! একজন হাজব্যান্ডের যদি ওয়াইফকে আদর-যত্ন করার অধিকার থাকে তাহলে অবশ্যই শাসন করার অধিকার আছে। নেক্সট টাইম আমার স্বামীকে কিছু বলার আগে সাবধান থাকবেন! বিধান নিচে চলেন তো আমার আর ভালো লাগছে না।
বলে বিধানের হাত ধরে টেনে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো বিথী।

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *