আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 25

বিধান ও আব্বি বিজনেসের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। আর বিথী ফেসবুকে নতুন লেখিকার ‘আড়ালে ভালোবাসার সংসার’ ও ‘রক্তিম চোখ গল্প পড়ছিলো মনযোগ দিয়ে। যার কারণে আশেপাশে কি হচ্ছিলো তার ভাবার বা দেখার প্রয়োজন পড়ছিলো না। অপরদিকে আম্মি টিভিতে তার পছন্দের ডেইলি সোপ দেখছে আর নীলাভ্র ও দিপ্ত আড্ডা দিচ্ছে। সবার কথার মধ্যেই একজন দৌড়ে এসে বিথীকে জড়িয়ে ধরলো। সে আর কেউ নয় আরিশা।
আরিশাঃ বিথুউউউউ!
বিথীঃ তুইইইইই!
আরিশাঃ হ্যাঁ আমি! (আবার জড়িয়ে ধরে)
দিপ্তঃ এমন ভাবে তো কখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে না ফিয়ন্সে হওয়া সত্ত্বেও! (বিড়বিড় করে বলল)
দিপ্ত বিড়বিড় করে বললেও একটু জোরেই বলে ফেলেছিলো যার কারণে সবাই শুনে ফেলেছিলো। তাই সবাই দিপ্তের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। আর বিথীর আব্বি ও আম্মি লজ্জায় উঠে চলে গেলো কারণ তারা বুঝে গিয়েছে তাদের বাচ্চাদের দুষ্টুমিতে এখানে তারা উপস্থিত থাকতে পারবে না। আব্বি আম্মি আরিশা কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী মুখে দিপ্তের সামনে দাঁড়ালো।
দিপ্তঃ কি হয়েছে জানু! তুমি এমন লাল হয়ে আছো কেনো? ( জোরপূর্বক হেসে)
আরিশাঃ আমি লাল হয়ে আছি কেন, তাই না! (চোখ রাঙিয়ে)
দিপ্তঃ হ্যাঁ তাইতো! (ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে)
আরিশাঃ দাঁড়া কইতাসি মুই কিল্লাই রাগি আছি! ( অতিরিক্ত রেগে )
এসব বলেই আরিশা দিপ্তের কান ধরে জোরে মুড়ে দিলো। আরিশার এ কাণ্ডে নীলাভ্র ও বিথী হেসে দিলেও বিধান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
দিপ্তঃ আহহহ! আরিশা ছাড় লাগছে!
আরিশাঃ লাগার জন্যই তো দিয়েছি! ( চোখ রাঙিয়ে)
দিপ্তঃ মাফ কর মা! আর জীবনে এমন করবো না। ( করুণ মুখে)
আরিশাঃ কিহহহ! আমি তোর মা হই? ( রেগে চিৎকার করে )
দিপ্তঃ না! না! বোন! কি বলছি! না! না! বউ! বউ লাগিস!
আরিশাঃ শালা কিয়া কস? বিয়া করলি কবে মোরে? তোর ফিয়ন্সে লাগিতে গাধা!
অজানাঃ ছেড়ে দে আরি! বেচারা আর করবো না।
হঠাৎ করে কে জানি এটা বলে উঠলো। কে বলেছে দেখতে পিছনে তাকাতেই দেখে একজন সুন্দরি নারী ও একটা কিউট বাবু দরজায় দাঁড়ায় আছে।
বিধানঃ এরা আবার কারা! ( মনে মনে)
বিধান এদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য পাশে তাকাতেই দেখে বিথি ঝড়ের গতিতে যেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো।
বিথীঃ আশাপু তুই কখন আসলি কানাডা থেকে! আমাকে বললি না যে?
আশাঃ আমি এই মাত্রই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা কাকাইয়ের বাসায় আসলাম আরিশার সাথে।
বিথীঃ আরিশার বাচ্চ! ( বলে রেগে তাকালো আরিশার দিকে)
আরিশা বিথীর তাকানো দেখে ভয়ে ঢোক গিললো।
আশাঃ ওরে বকিস না আমিই মানা করেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলে! নাউ ডিড ইউ লাইক মাই সারপ্রাইজ?
বিথীঃ ইয়েস অফ কোর্স! তা আপু জিজু আসে নাই?
ঠিক তখনই দরজা দিয়ে আশার স্বামী আয়ান ঢুকলো। দুই হাত দুইটা লাগেজ এবং তার পিছনে ড্রাইভিং আংকেলও ব্যাগ নিয়ে আসছে।
আয়ানঃ এই যে আমি শালি সাহেবা!
বিথীঃ ওহ জিজু! হাউ আর ইউ?
আয়ানঃ তোমার বোনের সাথে বিয়ে হওয়ার পর আছি কোনোরকম! ( করুণ চোখে )
বিথীঃ কেন গো জিজু কি করলো আমার বোন?
আয়ানঃ আমার অবস্থা দেখো! কোনো কুলির চেয়ে কম লাগছে! ( কাঁদোকাঁদো হয়ে)
আশাঃ আয়ান! ( চিৎকার করে)
হলরুমে অবস্থিত সবাই হেসে দিলো শুধুমাত্র বিধান ছাড়া কারণ সে বুঝতেই পারছে না কি হচ্ছে। হঠাৎ আশার নজর বিধানের উপর পড়লো।
আশাঃ মাশাল্লাহ! এই আমার বিথীর জামাই। যাক ছেলে আমার মনের মতো হইসে।
আয়ানঃ ভাবটা এমন যেনো নিজে বিয়ে করবে! ( ভেঙচি কেটে)
আশাঃ চুপ করো তো তুমি! খালি বেশি প্যাঁচাল! বিধান তুমি কিছু মনে করো না এই লোকটার তার ছিঁড়া!
বিধান একটা কনফিউজড লুক দিলো আর মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটালো। আশা বিষয়টা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো।
আশাঃ বুঝেছি। কনফিউজড রাইট? আমি হলাম বিথীর আপন কাকাতো বোন। আমি বড় হয়েছি কানাডা এবং ঐখানেরই এক বাঙালি ছেলের সাথেই আমার বিয়ে হয়। আর এতোক্ষণে এই গাধাটাই আমার ওয়ান এন্ড ওনলি হাজব্যান্ড!
বিধানঃ আর আরিশা ও দিপ্তের মধ্যে কি চলে?
বিথীঃ আমি বলছি। আরিশা ও দিপ্তের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তিন মাস আগেই।
বিধানঃ ওহ। এবার বুঝতে পেরেছি।
আয়াশাঃ সব্বাই সব বুঝতে তারতো সুধু আমাতেই ভুলে গেতো! (মুখ গোমরা করে)
আয়াশার এই কথায় হল রুমে উপস্থিত সবাই আরেক দফা হেসে দিলো।
বিথীঃ ওরে আমার বাচ্চাটা রাগু রাগু করছে?
আয়াশাঃ তরবো না সব্বাই তে তরিতয় তরায় দিলো আব্বুনের সাথে আমাতে তো তোনো তাত্তাই দিলো না!
বিথীঃ ওলে লে আমার পিচ্ছুটা! এক্ষণই আম্মুন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। পিচ্ছুর আব্বুন এটা আমাদের সুইট লিল আয়াশা। আশাপু ও আয়ান জিজুর একমাত্র রাজকন্যা।
আয়াশাঃ সুধু তুমিই আমাতে ভালোবাতো আম্মুন আর সবাই পতা!
বিধানঃ আমিও তো বাসি ছোট্ট পুতুলটা! ( বলে আয়াশাকে কোলে তুলে নিলো )
আয়াশাঃ সত্যিইই!
বিধানঃ হুম! (আয়াশার গালে চুমু দিয়ে)
আয়াশাঃ তাহলে আমাতে এত্ত না এত্ত এত্ত গুলা চতোলেট তিনে দিবা? ( হাত দিয়ে দেখিয়ে)
বিধানঃ অবশ্যই!
আশাঃ অনেক হয়েছে আয়াশা এখন এখানে আসো। আসার সময় ও প্লেনে ঠিকমতো কিছু খাওনি। ইউ হ্যাভ টু ইট নাউ।
তারপর ব্যাগ থেকে ফিডার বের করে আয়াশাকে খাওয়াতে খাওয়াতে সবার সাথে গল্প করছিলো।
আশাঃ আচ্ছা আই এম রেয়ালি টায়ার্ড নাউ সো আমি যাচ্ছি। আর হ্যাঁ আজকে রাতে কিন্তু কেউ ঘুমাবে না আজ সারা রাত মজমাস্তি হবো এন্ড সব এরেঞ্জমেন্ট আরিশা করে ফেলবে।
তারপর সবাই যে যার ঘরে চলে গেলো।
বিথীর লজ্জা পাওয়া দেখে বিধান বিথীর দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিলো। বিধান, দিপ্ত ও নীলাভ্রের চোখের আড়ালে বিথীর দিকে চোখ টিপ দিলো। বিথী তা দেখে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। বিধান তা দেখে মুচকি হেসে আবার বিথীকে লজ্জা দিতে লেগে পড়ে।
বিধানঃ দেখেছো! দেখেছো! দিপ্ত দেখো কেমন রাক্ষসীর মতো তাকায় আছে! তোমাকে সত্য বলায় আমাকে মনে হয় ঘরে নিয়ে আজ হেব্বি পেঁদানি দিবে!
বিথীঃ হারামী তোরে আমি কি মারমু তুইই তো আমারে ধমক মাইরা বহায় রাহস! শালা নেঙটা ইঁদুর! (বিড়বিড় করে)
বিথী বিড়বিড় করে বললেও কথাটা সেখানে উপস্থিত সবাই শুনে। বিধান তো চোখ রাঙিয়ে তাকায় বিথীর দিকে। বিথী বিড়বিড় করতে করতে উপরে তাকিয়ে দেখে বিধান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। বিথী তাই বিধানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো তাহলে যদি বজ্জাতটার রাগ ভাঙে। কিন্তু না।
বিধানঃ এই মেয়ে তুমু কি বলছিলে আমাকে? ( বিথীর কানে ফিসফিস করে দাঁতে দাঁত চেপে)
বিথীঃ না! না! খারাপ কিছু বলিনি তো। বলেছি আমার বরটা কতো ভালো এবং রোমান্টিক। একদম কিউটের বালতি। পুরাই পাণ্ডার মতো! দেখলেই ভালোবাসতে মন চায়!
বিথী ভয়ের চোটে বড়বড় করে মুখে যা আসছে বলে যাচ্ছে। সেটাও ফিসফিস করে নয় বেশ জোরে যার ফলে নীলাভ্র ও দিপ্ত উভয়েই সব শুনতে পারছে। বিধান অনেক কষ্ট নিজের হাসি কন্ট্রোল করলো আর দিপ্ত তো মুখ টিপে হাসছে। শুধু নীলাভ্রই নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় সবটা দেখে যাচ্ছে।
বিধানঃ সত্যি এতো ভালোবাসা আমায়!
বিথীঃ হুমম! প্লিজ আমায় বকবেন না!
দিপ্তঃ এতো ভালোবাসিলে বকবে কি করে। তুই তো ভালোবেসেই সব ভুলিয়ে দিবি।
দিপ্তের কথায় বিথীর হুশ আসে যে সে কাদের সামনে কি বলে ফেলেছে। এবার তো বেচারি চোখই তুলে তাকাতে পারছে না কারো দিকে। বিথীর কান্ডে বিধান ও দিপ্ত হোহো করে হেসে দেয়। এর মধ্যেই হঠাৎ নীলাভ্র নিচে নামতে শুরু করে।
নীলাভ্রঃ দিপু আমি গেলাম তুই আসলে আয় আমার লেট হচ্ছে!
দিপ্তঃ আমিও আসছি নীল ভাই! বাই জিজু!
বলে দিপ্তও চলে গেলো। নীলাভ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিধান বাকা হাসলো। বিথীর চোখে এই হাসি ধরা পড়লেও বর্তমানে এই হাসিত অর্থ উন্মেষণ করতে পারলো না। অবশ্য বিথী চায়ও না।
বিধানঃ কেন রে শালা কষ্ট হয় আমার বউকে আমার সাথে দেখে! ব্লাডি শ্যামলেস তোকে জালানোর জন্যই তো সবকিছু! ( মনে মনে বলে বাকা হাসে)
বিথীঃ কি হলো এমন পাগলের মতো বাকা হাসছেন কেনো? ( ভ্রু কুচকে)
বিধানঃ কিছু না জান চলো ঘরে যাই!
বিথীঃ হুম।
,
,
,
বিধান বিথীকে নিয়ে ঘরে ঢুকে বিথীকে বিছানায় বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসলো। বিধান দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে দেখে বিথী মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছে খুব মনযোগ দিয়ে।
বিধানঃ শালার বউ পাইছি একটা! গল্প পড়া থেকে উঠাইলাম তো গেমের পিছা লাগছে! ( বিড়বিড় করে)
বিধান বিথীর কিছুক্ষণ তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হেচকা টানে মোবাইলটা নিয়ে নিলো।
বিথীঃ আরে! কি সমস্যা!
বিধান বিথীর কথা শুনে বাকা হেসে বিথীর পাশে বসে পড়লো। বিথীর দিকে অনেকটা ঝুকে বিথীর কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। বিধানের এতোটা কাছে আসায় বিথীর বুকের ভিতরে যে কতটা উথালপাতাল হচ্ছে তা শুধু বিথীই বুঝতে পারছে।
বিধানঃ সমস্যা তো অনেকই হচ্ছে। বলবো? ( প্রেমাতাল ধীর গলায়)
বিথীঃ ন-নাহ। ( ঢুক গিলে)
বিধানঃ গুড! আর এতো ভয় পাচ্ছো কেনো জান? শোনো আমি অনেক টায়ার্ড এখন আমি একটু ঘুমাবো! ওকেহ?
বিথীঃ মাথা ঝুলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।
বিধানঃ তাহলে শুয়ে পড়।
বিথীঃ আ-আমি কেন শুবো?
বিধানঃ এজন্য! ( বলে বিধান বিথীকে শুয়িয়ে নিজে বিথীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।)
বিথীঃ আ-আপনি এখানে…….
বিধানঃ প্লিজ জান ডোন্ট ডিস্টালিস মি! আই এম রেয়ালি ভেরি টায়ার্ড!
বিথী বিধানের একথা শুনে কিছু বললো না বরং বিধানের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর মনে ডানা বাধা কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা শুরু করলো।
বিথীঃ কে আপনি? হঠাৎ আসা এক ঝড়োহাওয়া নাকি বসন্তেরকোকিল যার মধূর্যে আমি বারবার হারিয়ে যাচ্ছি! আপনাকে তো আমি কালবৈশাখীর সে ঝড়োহাওয়া ভেবেছিলাম যে জীবনটা তচনচ করে দিবে। তচনচ তো করেছেন আমার এই ক্ষুদ্র মনটাকে কারণ আপনার কাছে আসা যে ঝড় তুলে দেয় মনে। কেনো আপনি কাছে আসলে হার্টবিটস বেড়ে যায়! কেনো আপনাকে চড়ুই পাখির সেই বড় গাছটা লাগে যার ছায়াতলে আমি সর্বদা সুরোক্ষিতো? কেনো বুঝতে পারছি না! কেনো আপনার সাথে অন্যকে মেনে নিতে পারি না! আমি তো এমন ছিলাম না? এসব প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ মিলবে? আজ অতিতে পড়া একটা সায়েরি খুব মনে পড়ছে,
কুছ ইসতারহা শায়েদ হাম হোনে লাগে হে,
কি কোয়ি বান্দা পেহলিবার রাবকে সুন্নে লাগে হে!
কুছ ইসতারহা শায়েদ আপ মিলে রেহে হে হামারি জিন্দেগি সে,
যেসি মুরছায়ি সি ফুল আব মিলি হে পানি সে!
কুছ ইসতারহা দিল মে জাগ রেহে হ্যা জাজবাত,
কি ইস দিলকো পেহলিবার মিলা হ্যা উসকা হাকদার।
বিথী শায়েরিটা চোখ বন্ধ করে বেশ সুন্দর ভাবেই আবৃতি করে বলল। তার বলার ধরনে মনে হচ্ছে সে শায়েরির প্রতিটা শব্দ নিজের মন থেকে অনুভব করে বলছে। বিধান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে। বিথীর চোখে মুখে অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা কাজ করছিলো এই শায়েরিটা বলার সময়। যা বিধানের প্রেমিক মনকে ঘায়েল করতে বাধ্য। আসলে বিধান এতক্ষণ ঘুমোয়নি ও চোখ বন্ধ করেছিলো শুধু। বিথীর হঠাৎ শায়েরি পাঠ করায় ঘুম থেকে জেগে উঠে। বিথী চোখ খুলে বিধানকে এমন মাতাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়।
সবাই যার যার ঘরে চলে গেলেও বিথী ও বিধান যায়নি।
বিধানঃ বিথী চলো ঘরে যাই! আই এম রেয়ালি ভেরি টায়ার্ড!
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধান বিথীর দিকে তাকিয়ে দেখে সে ফোনে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। তাই বিধান কৌতূহল বশত বিথীর পাশে বসে দেখার চেষ্টা করে কি এমন দেখছে।
বিধানঃ বউ আমার এতো মনযোগ সহকারে ফোনে কি করছো? কারো সাথে টেক্সটিং করছে না তো! (মনে মনে)
বিধান দেখে বিথী ঈপ্সিতা শিকদার সামিয়ার লিখা ‘রক্তিম চোখ’ গল্পটাই মনযোগ সহকারে দেখছে। এটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
বিধানঃ বিথী সোনা শুনছেন? ( আদুরে গলায়)
বিথীঃ হুউউউ!
বিধানঃ কি ছাতার মাথা পড়ছে আমার কথাই তার কানে যাচ্ছে না লেখিকার নামে তো বউ চুরির মামলা দেয়া উচিত! (বিড়বিড় করে)
বিথীঃ কানের সামনে এমন মশার মতো ভ্যান ভ্যান করছেন কেনো? একটু জোরে বলুন শুনছি না তো! ( বিরক্তিপ্রকাশ করে)
বিধানঃ বলছিলাম রুমে চলো! ( ধীর কণ্ঠে)
বিথীঃ দেখছেন না আমি গল্প পড়ছি তারপরও জালাতন করছেন! (বিরক্ত হয়ে)
বিধানঃ বেশ করেছি তুমি যাবে কিনা বলো? ( রেগে)
বিথীঃ যাবোনা আমি আঙ্গুল চুষেন! ( ভেঙচি কেটে)
বিধানঃ যাবে না! বেশ! ( বাকা হেসে)
বিথীঃ হুহ!
বলে বিথী এক পলক বিধানের দিকে তাকিয়ে আবার গল্পে ডুব দিলো ‘রক্তিম চোখের’ আসল রহস্যের উন্মেষণ করতে।
,
,
,
ঠিক তখনই তার মনে হলো সে পরী হয়ে হাওয়ায় ভাবছে। বিষয়টা নিছক কল্পনা ভেবে আবার গল্পে ডুব দিলো। কিছুক্ষণ পরই অনুভব করলো সে হাওয়ায় নয় বরং কোলে ভাসছে।
বিথীঃ আহ…..
আর চিৎকার দিতে পারলো না বিধান মুখটাই বন্ধ করে দিলো। কি করে বন্ধ করলো তা নাহয় অজানাই থাক। কিছু বিষয় অজানাই ভালো লাগে। কিছুক্ষণ পর বিথীর ঠোঁট জোড়া বিধানের অঙ্গ হতে ছাড়া পেতেই। বিধানের উপর বিথীর নরম হাতের চর, কিল, ঘুষি বর্ষিত হতে লাগলো।
বিথীঃ অসভ্য পোলা! তুই আমারে…….
বিধানঃ তোমাকে কি জান? ( ঠোঁট কামড়ে)
বিথীঃ কিছু না! ( লজ্জা পেয়ে)
বিধানঃ না! না! কিছুতে বলতে নিয়েছিলে বলো না জান? বলো! ( চোখ টিপ দিয়ে)
বিথীঃ উফফফ! কিচ্ছু না বললাম না! আমাকে কোল থেকে নামান তো! ( কপাট রাগ দেখিয়ে)
বিধানের বুঝতে অসুবিধা হলো না বিথী রাগের আড়ালে লজ্জা লুকানো চেষ্ট করছে।
বিধানঃ না! না! সোনা তোমাকে তো শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে দিচ্ছি না আমি! খুব হাসাহাসি করছিলে না ঐ ফাতরটার সাথে। নাউ জাস্ট সি আমি তোমাকে কি করে লজ্জায় মারি! ( মনে মনে কথাগুলো বলে ঠোঁটে পৈশাচিক হাসি ফুটালো)
বিথীঃ কি হলো ব্যাটা এমন শয়তান মার্কা হাসি দিচ্ছে কেন? নিশ্চিত কোনো শয়তানি ভাবনা ভাবছে তাড়াতাড়ি কেটে পড়ি এখান থেকে! ( মনে মনে)
বিধানঃ কি হলো সোনাপাখি কি ভাবছো গো?
বিথীঃ কিছু না। আপনি আমাকে নামান তো! সামনে সিড়ি নিজেও পড়বেন আমাকেও ফালাবেন!
বলে বিথী নামার চেষ্টা করতে লাগলো।
বিধানঃ সোনা চুপচাপ থাকো নাহলে আছাড় দিবো একটা! ( দাঁতে দাঁত চেপে ধীর কণ্ঠে)
বিথীঃ প্লিজ নামান না! কেউ দেখলে কি ভাববে। ( করুণ দৃষ্টিতে)
বিধানঃ ওকে সোনা নামিয়ে দিবো। তোমার কথা কি আর ফেলতে পারি বলো? কিন্তু আই হ্যাভ আ কন্ডিশন!
বিথীঃ কোন কথা রাখছে আবার! আহাম্মক একটা! ( বিড়বিড় করে)
বিধান শুনেও না শুনার ভান করলো।
,
,
,
বিধানঃ বিথী কিছু বললে কি?
বিথীঃ নাহ! কি শর্ত বলেন?
বিধানঃ আমি কি অসভ্যতা করেছি তোমার সাথে বলো তো একটু!
বিধানের আবার একই কথা বলায় বিথী লজ্জায় লাল কমলা হতে লাগলো।
বিধানঃ উফফফ! মেয়েটা লজ্জা পেলে এতো মায়াবী কি করে লাগে! নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যে দায় হয়ে যায় বুঝেনা সে? (মনে মনে)
বিথীঃ ব-বললাম তো কিছুনা!
বিথী লজ্জায় লাল টুকু হয়ে যাচ্ছে যা দেখে বিধানের আরও লজ্জা দিতে ইচ্ছে করছে।
বিধানঃ এটা বললে হবে না বলতে হবে! ( ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে)
বিথী যেই না কিছু বলতে নিবে এ বিষয়ে ঠিক তখনই কারো হাটার আওয়াজ পেলো।
বিথীঃ প্লিজ নামান কেউ আসছে! ( বলে ছুটাছুটি করতে লাগলো)
বিধান ছুটাছুটিতে হাতের বাধান আলগা করে দিলো এমন ভাবে যে বিথীর মনে হবে সে পড়ে যাচ্ছে যদিও ফেলে দিবে না কাজটি নিছক ভয় দেখানোর জন্যই করেছে।
বিধানঃ নেও ছেড়ে দিচ্ছি!
বিথীঃ না! না! প্লিজ ছাড়বেন না! ( করুণ স্বরে)
বিথী ভয় পেয়ে বিধানের গলা জড়িয়ে ধরলো যাতে বিধান ছেড়ে দিলেও পড়ে না যায়। বিধান বিথীর কাণ্ডে মুচকি হাসলো।
বিধানঃ আর এমন ছুটাছুটি করবে?
বিথীঃ এই জীবন থাকতে না! ( ভীতু চোখে)
বিধানঃ গুড!
বলে সিঁড়িতে উঠে ঘরের মধ্যে হাঁটা দিলো। বিথী তখনও বিধানের গলা জড়িয়ে আছে ভয়ে। বলা তো যায় না যদি এই বজ্জাত ছেলেটা আবার তেমন কিছু করে।
,
,
,
সিঁড়ি বেয়ে উঠে বাম পাশে যেতে নিবে ঠিক তখনই দেখা পেলো নীলাভ্র ও দিপ্তের। নীলাভ্র তো ভূত দেখার মতো চমকে গেলো বিধান ও বিথীকে এভাবে দেখে আর দিপ্ত দাঁত কেলাচ্ছে।
দিপ্তঃ কি গো জিজু খুল্লাম খুল্লা রোমেন্স!
বিধানঃ আরে শালা সাহেব বইলো না তোমার বোনের আজ সখ উঠেছে কোলে চরার। এতো করে বললাম যে এখানে কি করে কেউ দেখে ফেলতে পারে কিন্তু সে উঠবেই! দেখো না কিভাবে সাপের মতো গলা পেঁচিয়ে ধরে আছে।
বলে নীলাভ্রকে দেখিয়ে বিথীর কপালে টুপ করে একটা চুমু খেলো। আর বিথী তো হা করে তাকায় আছে বিধানের মুখের দিকে।
বিথীঃ মানুষটা কি সুন্দর একের পর এক মিথ্যা বলে ফেলল তাও এমনভাবে অবিশ্বাস করার কোনো জো নেই। উনি কি মিথ্যা বলার ক্লাস নিয়েছে নাকি! নাহলে এতো সুন্দর ডাহা মিথ্যা কি করে বলেন? (মনে মনে)
দিপ্তঃ কিরে বিথী এমন হা করে বেচারা জিজুর দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবি বেচারারে!
দিপ্ত কথাটা বলে হুহা করে হেসে দিলো এবং তাকে হাসিতে বিধানও সঙ্গ দিলো। হাসি নেই শুধুই বিথী ও নীলাভ্রের মুখে। বিথীয় লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। তার অবস্থাটা এমন আল্লাহ মাটি ফাক করে দেও আমি ঢুকে যাই নাহয় দড়ি ফেলো আমি উপরে চরে যাই।

চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *