আমার বউ

আমার বউ- পর্ব–০৪

সারারাত ঘুমাইতে পারিনি।শুধু বিছানায় গড়াগড়ি আর গান শুনে
কাটিয়ে দিয়েছি।খুব সকাল বেলা হাটতে হাটতে কালাম
চাচার দোকানের পাশে মাচাটায় বসলাম।কালাম চাচা
এখনো দোকান খুলেনি।কিছুক্ষণ বাদে
পুস্পিতাকেও দেখলাম এইদিকেই আসছে।চোখ
দুইটা লাল হয়ে আছে। মনে হয় সারারাত কান্না
করেছে।পুষ্পিতা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো…
“আসলে..
এইটুকু বলেই চুল গুলা কানের একপাশে গুঁজে
দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।আমি বললাম
“স্যরি..
“জ্বীইই?
“আই এম স্যরি। আসলে আপনাকে কালকে
ওইভাবে রেখে আসাটা উচিৎ হয়নি।
পুষ্পিতা খানিকটা হাসার চেষ্টা করলো।তারপর বললো-
“আমি তো ভেবেছিলাম আপনাকে স্যরি বলবো।
আমার জন্য আপনাকে ওকয়ার্ড একটা সিচ্যুয়েশানে
পরতে হলো।
“সমস্যা নেই।মনের কথা চেপে রাখতে নেই।
শেয়ার করলে মন হাল্কা হয়।ও কেবল হাসলো।
এইবারের হাসিটা একদম অন্যরকম। হাসিটা দেখেই
আবার বুকের মধ্যে কেমন জানি করে উঠলো…
” রাত্রির সাথে ছয়মাস রিলেশন ছিলো।কখনো ওর
হাসি দেখে এরকম মনে হয়নি।ওর সাথে থাকলে
কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসতো।আমাকে ওর
গোলাম বানিয়ে রেখেছিলো।উঠতে বললে
উঠতে হবে বসতে বললে বসতে হবে।নিজের
কোন স্বাধীনতাই ছিলো না।পরে যখন ওর সাথে
একেবারেই থাকতে পারলাম না তখন ব্রেকাপ করে
নেই।ব্রেকাপের পর আমি খুব হ্যাপি ছিলাম।আই থিংক
ও নিজেও এই রিলেশনশিপে হ্যাপি ছিলোনা।তাই
দুইদিক থেকে কেউই আর যোগাযোগের
চেষ্টা করিনি।”
পুষ্পিতা বললো
“কি মি. কই হারাইলেন? কালাম চাচা দোকান খুলেছে।
আপনি কি যাবেন?
“হ্যা চলেন..
পুষ্পিতা চামচ দিয়ে চা খাচ্ছিলো আর আমি আড়
চোখে দেখছি।
“এভাবে আড় চোখে দেখার কিছু নাই।আমি ওর
কথায় আবারো কেবল লজ্জা পেলাম।মেয়েটা
বুঝে কিভাবে যে কেউ ওকে আড় চোখে
দেখছে? অদ্ভুত তো!!
এরপর একদিন নাম্বার নিয়েছিলাম।ওর হাসিটা অনেক
সুন্দর।ও ফোনের অপাশ থেকে শব্দ করে
হাসলে আমি এপাশ থেকে অনুভব করতাম।আস্তে
আস্তে একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয় আমাদের।
আপনি থেকে তুমি।তবে আমাদের মধ্যে
রিলেশনটা ফ্রেন্ডশিপ নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারিনা।ও
কখনো বুঝতে দেয়নি।আমি ওর জন্য কিছু একটা
ফিল করি।কিন্তু কখনো জানানো হয়নি।ইচ্ছা করে
জানাইনি।একটা ছেলে যদি কোন মেয়ের বিশ্বাস
ভাঙে অন্য আরেকটা ছেলের বিশ্বাস অর্জন
করতে অনেকটা সময় লাগে…
“একসময় বুঝতে পারলাম ওর উপরে খুব নির্ভরশীল
হয়ে পরছি।ওকে ছাড়া আমার কোন কিছু ঠিক মত
হচ্ছেনা।দিনে একবার কথা না হলে মনের মধ্যে
কেমন একটা ছটফটানি অনুভব করতাম।তাই ইচ্ছা করে
মেস চেঞ্জ করে যোগাযোগ কমিয়ে দিলাম।
নিজেকে অন্য কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা
করতে লাগলাম।ও মাঝেমাঝে ফোন দিয়ে
খোঁজখবর নিতো।কিন্তু আমি ফোন দিতাম না।তারপর
বাবা মারা গেলো।মেইস ছেড়ে চলে আসলাম।মাস
খানেক পার হওয়ার পর পুষ্পিতার মধ্যে একটা
পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।নিয়মিত আমার সাথে কথা
বলে।মাঝে মাঝে দেখাও করতে বলে।লক্ষ্য
করলাম আমি আবারো ওর উপরে ডিপেন্ডেবল
হয়ে পরছি..
পুষ্পিতা চেঞ্জ করে আমার সামনে দাড়ালো।ভেজা
চুলে ওকে বেশ অন্যরকম লাগছে।ওকে এই
অবস্থায় বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।
বাইরে আবারো সজোরে বৃষ্টি আরম্ভ
হয়েছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো কারেন্ট
এখনো যায়নি।আমি নিজেকে সামলে নিয়ে ওকে
বললাম-
“দাঁড়িয়ে কেন আছো? বসো..
পুষ্পিতা আমার পাশে বসতে বসতে বললো
“প্রণব আসলে…
“বলো..
“তোমাকে অনেক বার ফোনে ট্রাই করেছি।
তোমাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না।আমি কিছুদিন
তোমার এইখানে থাকলে তোমার কোন সমস্যা
হবে?
“না আমার আবার কি সমস্যা হবে।এইখানে কয়েকটা
রুম ফাকাই থাকে।তুমি যেকোনো একটাতে
থাকতে পারো।
“আসলে আমি মামার বাসা থেকে চলে এসেছি।
যতদিন না কোন চাকুরী পাচ্ছি ততদিন তোমার বাসায়…
“হুম বুঝলাম।কিন্তু হঠাৎ বাসা কেন ছাড়তে হলো
আপনাকে ম্যাডাম?
“আসলে মামা বিয়ে ঠিক করেছে।আমাদের কয়টা
বছর দেখলো কি না দেখলো আমার লাইফের
ডিসিশনস নিতে শুরু করে দিলো।তাও আমাকে না
জানিয়েই… আর আমিও চেনা নাই জানা নাই ওরকম
ছেলেকে কিভাবে বিয়ে করবো?আমার পক্ষে
এটা সম্ভব না।
“আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম..
এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো..রাত হয়ে
গেছে
বাসায় ক্যান্ডেল ও নেই।আর ফোনের ব্যাটারিও
ডেড..বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।এখন কি করবো?
পুস্পিতা আমার শার্টের হাতাটা শক্ত করে ধরলো।
আবারো আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে
উঠলো।বুঝলাম ওর খুব ভয় করছে।আমি ওকে
বললাম-
“ভয় পেয়ো না।কারেন্ট একটু পরেই চলে
আসবে।
“হুম…
কিছুক্ষণ পরে কারেন্ট আসলো।আমি পুষ্পিতা কে
ওর রুমে দিয়ে আসলাম।রাতে ঘুম থেকে
উঠেছিলাম একবার দেখলাম ওর রুমের লাইটটা
জ্বলছে।মনে হয় লাইট না জ্বালিয়ে ঘুমাইতে
পারেনা বা অন্য কোন কাজ করছে।
পরের দিন দুপুর বেলা টেস্ট ম্যাচ দেখছিলাম।দরজা
খোলাই ছিলো।ভাবিকে আসলো হাতে প্লেট
দিয়ে ঢেঁকে আমার জন্য কিছু একটা এনেছে।
ভালো কিছু রান্না করলেই আমাকে বাসায় ডাকে
নয়তো বাসায় এসে দিয়ে যায়।আমি কিছু বলার
আগেই ভাবি বললো-
“কি ছোট সাহেব কি খবর??ভাবিকে ভুলে গেছো
নাকি?দেখা করো না বেশ কয়েকদিন হলো।
“আরে কি যে বলো। তোমাকে ভুললে চলে?
আজকে কি রান্না করেছো??
“ভূনা খিচুড়ি..
“বাহ বেশ জমবে তাহলে দুপুরের খাবারটা।
“কি ব্যাপার বলো তো। তোমার বাসার সব কিছু এমন
গুছানো লাগছে।
ব্যাপার আমিও বুঝতেছিনা ভাবি।
এমন সময় পুষ্পিতা ওর রুম থেকে বের হয়ে
আসলো।ভাবি পুস্পিতাকে দেখে আমার দিকে
তাকিয়ে বললো-
” বিয়ে করেছো একবার জানানোর প্রয়োজন
মনে করলেনা? তোমার ভাইয়াকে না হোক
আমাকে তো একবার জানাইতে পারতে।
“আরে ছিঃ ছিঃ ভাবী তোমাদের না জানিয়ে আমি
কিভাবে বিয়ে করবো বলো?
“তাহলে মেয়েটা কে??
কথাটা শোনার পরে আমি পুষ্পিতার দিকে তাকাইলাম।
পুষ্পিতা বসতে বললো
“আমার নাম পুষ্পিতা।আমি আসলে প্রণবের ফ্রেন্ড।
ভাবী বললো-
“আমি প্রণবের ভাবী..
দুইজনের পরিচয় শেষেই গল্পের ঝুড়ি নিয়ে
বসলো।আমি শুধু একবার ভাবীর মুখের দিকে তাকাই
একবার পুষ্পিতার মুখের দিকে তাকাই।
ভাবী চলে গেলে পুষ্পিতা বললো
“তোমার ভাবীটা কিন্তু খুব ভালো আর অনেক
মিশুক।
“হ্যা। মিশুক যে বুঝতেই পারছিলাম তোমাদের
দেখে…
“প্রণব আমার রুমের লাইটটা জ্বলছেনা।একটু
দেখবে?আমি লাইট না জ্বালিয়ে রাতে ঘুমাইতে
পারিনা।
“আচ্ছা চলো দেখি…
চলবে ……..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *