আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 46

পরেরদিন সকালে অনুর আগে আরিয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আরিয়ান দেখে অনু তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমন্ত অনুকে দেখে আরিয়ানের খুব ভালো লাগছে।
পাঁচ বছর আগে যদি বিয়েটা সুন্দর ভাবে হতো তাহলে আজ ওদের মাঝে আরো একজন ঘুমিয়ে থাকতো।
তবে ভাগ্যের হাতে তো সবটা বাধা থাকে।

কেউ তো আর ইচ্ছা করলেই ভাগ্যের উপর দিয়ে যেতে পারে না।
এতো বছর পরে অবশেষে আরিয়ান অনুর মনের সাথে তাদের দুইটি শরীরের মিলন হয়েছে।
আজ থেকে সত্যি অর্থে তারা দুজন দুজনার পরিপূরক।
আরিয়ান কাল রাতের কথা ভেবে হাসতে থাকে।সত্যি বর বউয়ের সম্পর্ক আল্লাহর দান।
এর থেকে সুন্দর সম্পর্ক আর কি হতে পারে।
দু জন অচেনা অজানা মানুষ একটা ‘কবুল ‘শব্দের মাধ্যমে এতোটা কাছে আছে তা সত্যি অদৃশ্য কোনো শক্তির জন্য।
তাদের মাঝে মায়া,ভালবাসা সবটা একাই তৈরি হয়ে যায়।কেউ ইচ্ছা করলেও এই সম্পর্কের মায়াজাল থেকে বাহিরে আসতে পারবে না।
এই সম্পর্কের পবিত্রতা নিজেই মানুষদের ভালবাসা বাড়িয়ে দেয়।যতো দূরে থাকো না কেনো।
তাদের ভালবাসা কখনো কমবে না।
হয়তো অভিমান, রাগে একটু ধুলোবালি পড়বে।
তবে কাছে আসলে সেই ধুলোবালি ও থাকবে না।
আরিয়ান এইসব কথা ভাবতে ভাবতে অনুর কপালের এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে চুমা দিয়ে দেয়।
কপালে আরিয়ানের স্পর্শ পেয়ে অনু মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”ওরে দুষ্টু সাত সকালে আমাকে এভাবে দেখার কি আছে বলবে একটু? ”
আরিয়ান বলে,”আমি কি তোমাকে দেখেছি না কি? আমি আমার বউ কে দেখছিলাম এর মাঝে তোমাকে কথা বলতে কে বলছে ফাজিল মেয়ে?”
অনু আরিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”এই যে মিস্টার আমি আপনার বিয়ে করা বউ।
আমাকে দেখছে আবার আমাকে কথা শোনাবে হুহ।”
আরিয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি তো আমার অনু বউকে দেখছিলাম কিন্তু সে যে চুরি করে আমাকে লুকিয়ে দেখছিল আর আমার আদর গুলো উপভোগ করছিল তা কে জানতো।”

অনু আরিয়ান কে ছেড়ে একটু দূরে সরে গিয়ে বলে,”নিবো না তোমার আদর দরকার নেই।
সব আদর ব্যাংকের লকারে লক করে রেখে আসো।”
আরিয়ান উঠে বসে বলে,”ওরে ফাজিল মেয়ে এখন তার আর আদর লাগবে না তাই তো?
তাহলে রাতের সব আদর ফেরত দাও নয়তো তোমার খবর আছে এই আমি বলে দিলাম। ”
অনু আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রেখে সে এক দৌড়ে বাথরুমে চলে যায়।
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে ভেতর থেকে বলে,”যে আদর গুলো আমার সে গুলো ফেরত কেনো দিতে যাবো।
যা একবার দিবা তা আর কখনো ফেরত দিবো না বুঝলে তুমি আমার ক্রাশ বর।”
আরিয়ান দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে বলে,”এই ফাজিল মেয়ে আমাকে এভাবে ফাঁকি দেওয়ার মানে কি? দরজা খোলো বলছি।
নয়তো দেখে কি অবস্থা করি তোমার।”
অনু ভেতর থেকে বলে,”কচু করবে তুমি আমার।তোমাকে আমার খুব ভালো করে চেনা আছে।
তুমি আদর ছাড়া আর কিছু করবে না আমাকে।”
আরিয়ান বলে,”তুমি এতো বিশ্বাস করো আমাকে অনু? ”
অনু বলে,”নিজের থেকেও বেশি।”

এরপর অনু বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে আসে।
আরিয়ান অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
তা দেখে অনু বলে,”আরে দাদী মা আপনি? ”
দাদী মা’র কথা শুনে আরিয়ান অনুকে ছেড়ে সরে যায়।
আরিয়ান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তাদের রুমের দরজা লক করা।দাদী মা কোথাও নেই।
আরিয়ান অনুকে তাড়া করে বলে,”ওরে শয়তান মেয়ে তোমার দুষ্টুমি যে আমাকে বাঁশ দেয় তা তুমি বোঝো না? সব সময় দুষ্টুমি করা তাই না? ”
অনু বলে,”তুমি আমার একমাত্র বর তোমার সাথে দুষ্টুমি করবো না তো কার সাথে করবো বলো? ”
আরিয়ান বলে,”আমি তো তোমার এই দুষ্টু মিষ্টি মজার প্রেমে পরেছি।
তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি অনু।”
অনু বলে,”আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
কিন্তু এখন তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমার জন্য নিচে গিয়ে নাস্তা রেডি করছি।”
আরিয়ান বলে,”জ্বি ম্যাডাম আপনার অর্ডারের উপর দিয়ে তো আর যেতে পারি না।
আমার বউ ভালবেসে বলেছে তা তো শুনতেই হবে আমাকে।”
অনু আরিয়ান কে ঠেলে বাথরুমের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে নিচে নেমে চলে আসে।
অনুকে নিচে আসতে দেখে রিমি আর রিদি এগিয়ে এসে ওকে ঘিরে ধরে বলে,”কি বেপার ম্যাডাম কে যে একদম অন্যরকম দেখাচ্ছে বেপার কি? ”
রিমি বলে,”আরে রিদি বোঝো না এটা যে আরিয়ানের রং এর প্রভাব।
তার রং এ রাঙা বউ সেজেছে আজ অনু।”
অনু বলে,”আরে সাত সকালে এসব কি শুরু করেছো তোমরা আমাকে যেতে দাও আমার অনেক কাজ আছে।”
রিদি বলে,”ঐ মাইয়া থাম তো তুই!

সারা বছর তো কাজ করবি আজ আমাদের সাথে তুই গল্প করবি।”
এমন সময় রাহেলা চৌধুরী এসে বলে,”আমিও কি তোমাদের সাথে গল্পের আসরে যোগ দিতে পারি? ”
ওরা সবাই রাহেলা চৌধুরীর মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
অনু এগিয়ে এসে বলে,”অবশ্যই আপনি আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
আপনিও তো আমাদের বান্ধবী তাই না দাদী মা।”
দাদী মা বলে,”তোমরা আমাকে দাদী মা বলো ঠিক আছে সেখানে আবার আপনি যোগ করো কেনো? আমাকে তোমরা তুমি করে বলবে তাহলে আমারো ভাল লাগবে।”
রিদি বলে,”আফসোস আপনি আমার দাদী মা না! আপনি আমার নানী শ্বাশুড়ি।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”হুম,কিছু করার নেই!
নানী দাদী যাই বলে ডাকো না কেনো।
সেই ডাকটা মন থেকে ডেকো তাহলে হবে।”
অনু বলে,”এই সবাই মনে রাখবে এই সুন্দরি চৌধুরী বাড়ির সব নাতবউদের বান্ধবী হয়।”
রাহেলা চৌধুরী অনুর কান টেনে ধরে বলে,”এই দুষ্টু বুড়ি কাল রাতে সবার সামনে তুই কি করেছিস মনে আছে তোর? ”
অনু মাথা চুলকিয়ে বলে,”কই আমি কি করেছি কিছুই তো আমার মনে নেই।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”তুই সবার সামনে আমার নাতী কে চুমা দিয়েছিস।”
অনু একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে,”আমি যখন চুমা দিয়েছিলাম তখন তোমরা চোখ বন্ধ করে রাখলেই পারতে।
দোষ তোমাদের তোমরা দেখেছ।

আমি তো কাউকে দেখতে বলি নাই।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”ওরে দুষ্টু মেয়ে তোর কিছু করতে হবে।”
অনু বলে,”দাদী মা তোমার ছেলের বউকে দাদী মা বানিয়ে দিবো চিন্তা করো না।
তাহলে আমার কিছু করতে পারবে না তুমি।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”ওরে আল্লাহ এই মেয়ে কতো এডভান্স ভাবা যায়! ”
আরিয়ান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় বলে,”ওর সাথে আর কিছুদিন থাকলে তুমি অবশ্যই পাগল হয়ে যাবে জান।
তাই ঐ পাগলীর থেকে দূরে থেকো।”
রাহেলা চৌধুরী বলে,”তাহলে তো তোকে আগে এই পাগলির থেকে দূরে রাখতে হবে।
নয়তো ওর মতো পাগল হয়ে যেতে পারিস।”
আরিয়ান বলে,”এই তুমি আমাকে নিয়ে টানাটানি করছো কেনো? থাক আমার অফিস আছে আমি নাস্তা করে অফিসে চলে যাচ্ছি। ”
একটু পর আরিয়ান নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।

তারপর রাজ,আয়াত,রিমি,রিদি সবাই অফিসের জন্য বেড়িয়ে যায়।
অনু বাড়িতে একা বসে বসে বিরক্তি হতে থাকে।
তাই দেখে দাদী মা অনুকে বলে,”নাতবউ তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে নাও তাহলে বর বাহিরে যাবার পর আরেক জনের সাথে সময় পার করতে পারবে।”
অনু দাদী মা’র কথা শুনে এক গাল হেসে দেয়।তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।
এভাবে হাসি-কান্না মজাতে ওদের বেশ কিছুদিন কেটে যায়।
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন পার হয়ে যায়।
এর মাঝে আয়েশা বেগম অনুকে ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে।
তবে তার ভালবাসাটা এখনো সবার সামনে প্রকাশ পায়নি।
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো সবার কাছে থেকে)



চলবে…..