অভিশপ্ত বাসর

অভিশপ্ত বাসর রাত ! পর্ব- ৫

সাবিহা যখন বিকেলে হসপিটালে পৌছাল
ইমারজেন্সীতে যে রোগীর
ফলোআপ নিবে তার কেবিনের সামনে
পৌছেই দেখল ওর শাশুড়বাড়ির লোকজন
সবাই বসে আছে। খুব বিরক্ত হল ও কারন
ও বুঝছিল যে ওকে মানাতে এসেছে
তারা, তাছাড়া ও চায় না এখনি ওর পার্সোনাল
ব্যাপারে হসপিটালের কলিগরা জানুক,এতদিন
তো সংসারের নামে সবাইকে মিথ্যা
বলে আসছে, এখন যদি এই নাটক
দেখে তখন কি বলবে??? কিন্তু তাই
বলে এত লোকজন?? ওর শাশুড়িকে
কাঁদতে দেখে তার কাছে এগিয়ে
গেল। সবাই যখন ওকে দেখল ওর ননদ
ওকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল –
দেখো না ভাবি ভাইয়া এ্যাকসিডেন্ট
করেছে, মাথায় খুব ব্যাথা পেয়েছে।
ওর শাশুড়ি বলল-মা, তুই যখন এসেছিস
আমার মেহবুব সত্যিই এবার সুস্থ হবে।
আমাকে যেভাবে সুস্থ করছিলি, ওকেও
সুস্থ করে তোল মা।
-ডা.কি বলেছে?
-ভাবি, ডা. এখনও কিছু বলে নি শুধু
বলেছে প্রচুর রক্ত গেছে, জরুরী
ভাবে রক্ত দেয়া হইছে। তবে এখনও
জ্ঞান ফিরে নি।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
এই বলে ও কেবিনে গেল, মেহবুব
বিছানায় শোয়া, এখনও জ্ঞান ফিরে নি।
-বাবাহ্, মেহবুব সাহেব! আপনার কথার ঝাঁঝ
কৈ গেল?আহারে আপনি আপনার সিংহাসন
ছেড়ে এই হসপিটালে কেন?আপনাকে
তো ভাব ছাড়া এভাবে মানায় না, ব্যাটা
শয়তান। বোঝ মজা এবার। —মনে মনে
ভাবতে ভাবতে বিছানার পাশে গেল।
পুরো ফলো আপ নিল, কন্ডিশন
আসলেই খারাপ। নার্সকে ঘুমের
ইঞ্জাকশন দিতে বলল।দেখল মেহবুব
চোখ হালকা খুলছে আর ওর কি হা করে
তাকিয়ে আছে।
ও চোখ কুচঁকে মেহবুবের দিকে
তাকিয়ে মনে মনে বলল
-আসলেই তো ব্যাটার মনে জোড়
আছে, এত কিছু হল তারপরও এত তারাতারি
জ্ঞান এল???ভাবিস্ট দেখি জাতে মাতাল
তালে ঠিক।… ভাবছিল ব্যাটা কিছুদিন থাকুক
বিছানায় শুয়ে।
ও করল কি নার্সকে সিরিয়াস মুখে বলল –
আরও এক ডোজ বেশি পাওয়ার ঘুমের
ঔষুধ দাও ওনাকে, ওনার পুরো বেড
রেস্ট দরকার।
এই বলে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে
হাসতে কেবিন থেকে বেরিয়ে ওর
শাশুড়ির কাছে গেল, গিয়ে পুরো
গম্ভীর মুখে বলল -মা, ওনার মাথার যখম
বেশি,তবে পুরোপুরি আশংকা মুক্ত। ওনার
পুরো বেড রেস্ট চলবে কিছুদিন।
আপনি টেনশন নিবেন না।
-আমি জানতাম মা, তুমি আসলেই ও ঠিক
হবে। তুমি ওর কাছ থেকে কোথাও যাবা
না, তাহলে আমার ছেলে আবার অসুস্থ
হবে।
হাহ্ আপনার ছেলে তো আমাকে
দেখতেই চায় না ভাবল।
রাতের দিকে মেহবুবের কলিগরা আর
ওর কিছু বন্ধুবান্ধব আসল দেখতে।তারা
ওকে দেখবে কি সাবিহাকেই সবাই
দেখতে চায়, কথা বলতে চায়।বিয়ের
সময় সবাই দেখেছিল ওকে, পরে সবাই
ওকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেও
মেহবুব ওকে নেয় নি।
ও ও মনের রাগ ভুলে তাদের সাথে কথা
বলেছে।কাউকে বুঝতেই দিল না
ওদের মধ্যে কোন সমস্যা আছে।
সবাই যাবার পর, ওর শশুড় বাড়ির সবাইকে
বাসায় পাঠিয়ে দিল- -ওনার তো সকালের
আগে জ্ঞান ফিরবে না, আপনারা বাসায়
চলে যান। কোন সমস্যা হলে আমি বাবা
বা ভাইয়াকে ফোন দিব।এই বলে ও
জোড় করে সবাইকে বাসায় পাঠাল। আর
ওর অসহ্যও লাগছিল, তারা থাকলে তাদের
সাথে কথা বলা লাগত আর এখন ওর মন বা
মেজাজ কিছুই ঠিক নেই কোন ফর্মালিটি
পালন করার।তাছাড়া সকাল থেকে তাদের
ছেলে ওর সাথে যা যা করছে এখন
মেহবুবের পাশাপাশি ওর ফ্যামিলির প্রতিও
বিরক্তি এসে গেছে, যেন এখন সবাই
গেলেই বাঁচে।
ডা.লাউঞ্জে ফিরে এল ও,ভাবল মুমুকে
ফোন দিবে। -হ্যালো মুমু আমি না আজ
ফিরব না, তুই চিন্তা করিস না।
-কেন তুই কোথায়?
-হসপিটালে একটা জরুরী কাজ পরে
গেছে রে।
-আমি বললাম না তোকে কাজ দিয়ে ছুটি
নিতে?
-হ্যা নিব তো আর হ্যা শোন আমি
সকালে ডিউটি শেষে আপুর বাসায় যাব।
আন্টিকে বলিস যে মা বাবার সাথে আমিই
কথা বলব সে যেন টেনশন না করে,
পরে কি হয় আমি তোকে জানাব।
-ওকে বাই, টেক কেয়ার।
-বাই।
সাবিহার মনটা খারাপ লাগছিল মেহবুবের
মায়ের জন্য, ছেলেটা যাই হোক ওর
পরিবারপরিজন কখনই ওকে অবহেলা
করে নি বিয়ের পর থেকে।
টেবিলে বসে বসে ভাবতেছিল ও
বিয়ের পরদিন থেকে কি না সহ্য
করছে। ওই তো একসময় ছিল
সবকিছুতে নাক কুঁচকানো, রাগচটা।যে
অন্যের কোন উল্টো কথা শুনতেই
পারত না, চিৎকার চেঁচামেচি করে বাসা মাথায়
নিত। ওর দুলাভাই বলত -আমার শশুরের কষ্ট
আছে এই মেয়ের বিয়ে দিতে।
হ্যা আজ ও কথা শুনে কিন্তু চুপ
করে,মেহবুবের। ছোটবেলা
থেকেই ওর শপিংয়ের খুব ইচ্ছা। প্রতি
সপ্তাহে ওর শপিং করা লাগবেই। মা বাবা
কিছুই বলত না। কি বা বলবে একমাএ ছোট
মেয়ে ও। ও খরচ করবে না তো কে
করবে??? কিন্তু বিয়ের পর এই নিয়ে
কথা শুনতে হবে তা কোনদিন ভাবেই নি।
ভাবল সে দিন যে দিন ওর শাশুড়ি
মেহবুবকে বলল -সাবিহাকে নিয়ে
শপিংয়ে যা। দিনটা ছিল বিয়ের এক সপ্তাহ
পর।ও ভাবছিল মেহবুবের সাথে কিছুটা
সময় কাটাতে পারলে হয়ত ওকে বুঝতে
পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সেজে
গুজে বের হল ওর সাথে। শপিং মলে
গিয়ে ও বাড়ির জন্য সবার জন্য কিছু না কিছু
কিনল। মেহবুব পুরোটা সময় কোন
কথাই বলল না। এক রাশ বিরক্ত নিয়ে ওর
পিছু পিছু হাটতে ছিল।
[6/5, 3:27 PM] Promity: । এক বার একটা
ব্যাগ হাতে নেবার কথা বলেছিল, ওর
দিকে এমন ভাবে কটমট করে তাকিয়ে
ছিল যেন কোন কাজের লোকের
কাজ করে দেয়ার কথা বলছিল তখন ওর
হাতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বলেছিল –
আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম তুমি কাজ শেষ
করে এসো।
ও তখন সবার জন্য কেনার পাশাপাশি
মেহবুবের জন্যও একটা নীল পাঞ্জাবি
কিনল। কিন্তু নিজের জন্য কিছুই কিনল না
মেহবুবের টাকা দিয়ে কারন ওর ইচ্ছা ছিল
মেহবুব নিজে থেকে যেদিন ওকে
কিছু কিনে দিবে সেইদিনই ওর থেকে
নিবে তার আগে না। শপিং সেরে বাসায়
যাবার পথে মেহবুবকে ওর পাঞ্জাবির
প্যাকেটটি দিল, খুলার পর ওটা দেখেই
ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল -এটা কোন
রং হল?? আমি এসব পড়ি না।আর এত দেরি
কেন আমি কি তোমার পিয়ন??
এরকম লজ্জাকর অবস্থায়ওকোন দিন
পরে নি সাবিহা, না পারছিল কাঁদতে না পারছিল
গাড়ি হতে নেমে যেতে। সারাটা পথ মাথা
নিচু করে বাসায় পৌছাল। বাসায় সবার পোশাক
দিল। সবাই খুবই পছন্দ করল।কিন্তু মন
ভরবে কি???কি লাভ হলো সবাইকে খুশি
করে? যার জন্য করছে, সে ওর সাথে
কি বিহেব করল?
রূমে গিয়ে পা দেয় কি দেয় নি
শুনতেছে মেহবুব কাকে যেন
বলছে ফোনে -এই মেয়ে সংসার
করার মত না, আজ আমার হাজার হাজার টাকা
নস্ট করছে। এমন ভাব করছে যেন
মলে কোনদিন যায় নি,ছোটলোক!!!
সাবিহা ছোটলোক!! যে নিজের হাতে
ইনকাম করে!!! ও কিছুই না বলে ওর ব্যাগটা
নিয়ে বাসা হতে বের হয়ে যায়
হসপিটালে ডিউটি আছে বলে, আসলে
ডিউটি ছিল না, বাসায় থাকবে না ভেবেই
হসপিটালে ওভার টাইম করবে,
চলবে…..
বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *