অপেক্ষা

অপেক্ষা !! Part- 03

রাফিন চলে যাবার পরে আমি রোজ কলেজ যাবার সময় খেয়াল করতাম একটা ছেলে আমাকে ফলো করছে।
আমি তেমন পাত্তা দিতাম না।ছেলেটাকে কখনো বুঝতে দেইনি যে আমি ওকে দেখে ফেলেছি।আমি এখন কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটি তে উঠে গেছি।জীবনটা অনেক পাল্টে গেছে,সাথে কথাবার্তা, স্টাইল ড্রেস, সবকিছু রাফিনের জন্য ।তবে সেই ছেলেটা এখনো ফলো করে আমাকে।তবে আগের মত রোজ না,মাঝে মাঝে।
সবথেকে অবাক হয়েছিলাম সেদিন যেদিন ঐ ছেলেট আমাদের বাসায় এসেছিলো।সেদিন আমি ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার সময় ঐ ছেলেটাকে দেখিনি।মনে মনে খুব খুশি হয়ে ছিলাম। আমি বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে টিভি দেখছি ঠিক সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো, বাসা ভর্তি মানুষ,সবাই বিজি আপুকে নিয়ে।কারন আর মাত্র ২দিন পরেই আপুর Engagement , তাই দরজাটা আমাকেই খুলতে হবে।আমি দরজা খুলতে গেলাম।দরজা খুলে তো আমি পুরো অবাক।আমাকে যে ছেলেটা ফলো করে সেই ছেলেটা আমার বাসাই পৌছে গেছে কত বড় বেহায়া।তাও আবার সাথে একগাদা ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে
-একি আপনি এখানে? ফলো করতে করতে ঠিক বাসা পর্যন্ত চলে আসছেন না?এই আপনাদের মত বখাটে দের না খুব ভালো করে চেনা আছে। বের হন বলছি এখনি না হলে মাইর দিয়ে হাত পা ভেঙে ফেলবো একদম। (আমি ছেলেটাকে এসব কথা বলছি তখনি ভেতর থেকে আপু এসে আমাকে সরিয়ে বলতে লাগলো

আপু-কি রে শুভ এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?
ভেতরে চল।(আমি তো আবাক আপুর কথা শুনে)
আমি-আপু তুমি একে কি করে চিনো?
আপু- আরে হাদারাম ও আমাদের আসাদ মামার ছেলে শুভ।চিনতে পারছিস না।
-আমি আপুর কথা শুনে লজ্জাই সেখানে আর দাড়াতে পারলাম না।না জেনে কি অপমান টাই না করেছি। আর উনিও বা কি একটা কথাও বলেনি শুধু হা করে তাকিয়ে ছিলেন মুখের দিকে।আমি সেখান থেকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।শুভ ভাইয়া আমাদের রিলেটিভ আবার আপুর ফ্রেন্ড। সেই ক্লাস ৮ এ ছিলাম তখন একবার দেখেছি ওনাকে।কি করে মনে থাকবে।আমাকে যে ছেলেটা ফলো করতো কিছুটা তার মতোই লাগছিলো শুভ ভাইয়াকে।ইসস কি ভুলটাই না করলাম।এখন কি করে যাবো ওনার সামনে। ধ্যাত আমিও না এমন এক একটা কাজ করি।আয়নার সামনে বসে বসে এসব ভাবছি তখনি দেখি পেছনে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।পেছনে ফিরে দেখি শুভ ভাইয়া।
-ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া আআআপনি?(ভয়ে ভয়ে,ভেবেছিলাম বকা দিতে -ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া আআআপনি?(ভয়ে ভয়ে,ভেবেছিলাম বকা দিতে এসেছে)
-কেমন আছো সেজুতি?
-ভাইয়া আসলে আমি সরি, আপনি আপুকে কিছু বলবেন না প্লিজ।আমি আপনাকে চিনতে না পেরে যা ইচ্ছা বলে ফেলেছি সরি সরি ভাইয়া।একাধারে বলেই চলেছি হঠাৎ খেয়াল করলাম শুভ ভাইয়া আমার দিকে এগোচ্ছে । এগিয়ে হঠাৎ করে আমার মুখটা তার এক হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো”চুপ করো হয়ছে আমি কিছু মনে করিনি তো”।
আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনিও এক পলকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে,যেনো কত জন্মের প্রেম ওনার ঐ চোখে আমার জন্য জমা করে রেখেছেন উনি।হঠাৎ করে কেনো জানিনা আমার রাফিনের কথা মনে পড়ে গেলে।তারপর এক ধাক্কা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে আমি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলাম।
নিচে গিয়ে টেবিলে খাবার সময় শুনলাম শুভ ভাই আপুর বিয়ের সব কিছু দেখাশোনা করবে।বাড়ি সাজানো সব দায়িত্ব ওনার।আমাদের কোনো বড় ভাই নেই তাই ওনাকে ডাকা হয়েছে নাকি এসবের জন্য।
আমি খাওয়া শেষ করে উপরে এসে মুড অফ করে বসে রইলাম।শুভ ভাইয়ার মতিগতি ভালো লাগছে না আমার।এতদিন কেনো থাকতে হবে ওকে।বিয়ের তো এখনো এক মাস বাকি।এসব ভাবতে ভাবতে সন্ধা হয়ে এলো আমি একটু ছাদে গিয়ে দাড়ালাম।আকাশে বেশ ভালোই মেঘ করেছে মনে হয় বৃষ্টি হবে। পোরসু ৩ তারিখ আপুর Engagement.এ মাসের ২৯ তারিখ বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে।ভাবছি Engagement যদি এত মানুষ হয় তাহলে বিয়েতে কত মানুষ হবে।Engagement এর দুদিন আগেই সব এসে হাজির।নিজের রুমটা মনে হয় এবার দখল হয়ে যাবে,আগে আপুর সাথে ঘুমাতাম।বড় হয়েছি,এখন একাই থাকি।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম কিন্ত আশেপাশে কেউ নেই।একটু একটু ভয় করতে লাগলো কারন রাত হয়ে গেছে।
আবারো কারো পায়ের আওয়াজ।পেছন ঘুরতেই কেউ একজন জোরে ভয় দেখালো আমি প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলাম।সেন্স ফিরার পর আমি নিজেকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করলাম।মাথার কাছে বসে আছে শুভ ভাইয়া।হালকা ভাবে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে পানি।আমি তাকিয়েছি সেটা তিনি বুঝতে পেরে চোখের পানি মোছার বৃথা চেষ্টা করলেন।যদিও আমি সেটা আগেই দেখে ফলেছি।আমি উঠে বসলাম বসার সাথে সাথে শুভ ভাই আমার হাতদুটো ওনার হাতের মুঠোর ভেতরে নিয়ে বললেন “সরি, আমি আসলে বুঝতে পারিনি এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।এটা বলে তিনি নিজের চোখ মুছতে মুছতে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।এই মানুষটা আমাদের বাসার আসার পর থেকে কেমন জানি অদ্ভুত আচারন করছে।কিছুই বুঝতে পারছি না।
ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি বাড়ি একদম ফাকা।আমি এদিক ওদিক দেখছি তখনি কেউ একজন বলে উঠলো খুজে লাভ নেই, সবাই সপিং করতে গেছে।তুমি যে সেন্সলেস হয়ে গেছিলে তোমার আপুকে বলেছিলাম ও সবটা ম্যানেজ করে সবাইকে নিয়ে গেছে।
আমি শুভ ভাইয়ার কথা শুনে উপরে চলে যাচ্ছি ঠিক তখনি সে বলে উঠলো”সবসময় এমন ড্রেস না পরলে হয় না?”
আমি -কেমন ড্রেস?
শুভ-এই যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস।একটু কপালে একটা টিপ দিতে তো পারো,একদিন একটা শাড়ি পরে খোপায় একটু ফুল তো দিতে পারো।কিংবা হালকা রঙের একটা থ্রীপিচ পরে চুলগুলো ছেড়ে রাখলে।
-আমি কিছু না বলে উপরে চলে গেলাম, আর শুভ ভাই জোরে বলে উঠলো পোরসু বিথির Engagement এর দিন একটা শাড়ি পরো,খুব খুশি হবো।
আমি সাথে সাথে তার দিকে ফিরে বললাম আপনি কিসে খুশি হবেন কিসে হবেন না সেটাই আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।আর শাড়ি পরিনা না আমি।(রাফিন শাড়ি পছন্দ করে না একদম তাই কখনো পরিনি শাড়ি আমি)।

উপরে আমার রুমের বেলকনিতে দাড়িয়ে ভাবছি,দুটো মানুষের পছন্দ কতটা ভিন্ন হতে পারে।এই যেমন রাফিন শাড়ি পছন্দ করে না,মোট কথা ও বাঙালি সাজি পছন্দ করে না অপরদিকে শুভ ভাইয়ার বাঙালি সাজ পছন্দ।আমি শাড়ি পরতে ভালোবাসি শুধু মাত্র রাফিনের জন্য পরিনা অথচ ও আমাকে ভালোই বাসেনা।ভাগ্য বড় কঠিন জিনিস।
হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি চলে গেলো,সাথে বাইরে শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি।বৃষ্টি ঠিক আছে তবে বাজ পড়াব শব্দ আমার ভিষন ভয় লাগে।এসব ভাবছি সাথে সাথে শুভ ভাই ডাক দিলেন, বললেন নিচে যেতে।পুরো বাড়ি অন্ধকার।নিচে নামতে গিয়ে কিছু একটার সাথে জোরে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গেলাম।প্রচন্ড বেথাই আমি চিৎকার করে উঠলাম, আল্লাহ গো বলে,ফোনটা আনতেও ভুলে গেছি। সাথে সাথে শুভ ভাইয়া বলে উঠলো কি হলো?কি হলো?
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আমি ওনার সাথেই ধাক্কা খেয়েছি।
আমি-কানা নাকি আপনি শুভ ভাই?দেখছেন আসছি সামনে কেনো আসলেন?
শুভ ভাই-আমি কানা হলে তুমি কি?অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে?পড়লে তুমি আর আমার দোষ।
আমি এখনো ফ্লোরে পড়ে আছি।উঠতে গিয়ে দেখালাম উঠতে পারছি না। কোমরে প্রচন্ড বেথা লেগেছে।আমি বেথাই কেঁদে দিলাম।
শুভ-কি হলো কাঁদছো কেনো?
আমি-উঠতে পারছি না আমি।সব আপনার জন্য হয়েছে সব।(বলে আবার কান্না শুরু করলাম)।
শুভ ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে,আমাকে তার কোলে তুলে নিলেন,নিয়ে সোফাই শুয়াই দিলেন।আর আমি কেঁদেই চলেছি।কি করবো বেথা লেগেছে অনেক।শুভ ভাইয়া কাকে যেনে কল দিয়ে ঐষধ আনতে বললেন। চলো তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।
-না আমি একাই পারবো।
-ঠিক আছে পারলে যাও।
আমি উঠতে চেষ্টা করলাম কিন্ত পারলাম না।শুভ ভাইয়া হাসতে হাসতে আমাকে নিয়ে গেলেন আমার রুমে।গিয়ে আমাকে শুয়াতে গিয়ে নিজেও আমার উপরে পড়ে গেলেন,তাতে আমার কোমরে আরো বেথা লাগলো,আমি আল্লাহ বলে উঠলাম।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত।খেয়াল করলাম শুভ ভাই না উঠে আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।যেনো কতবছর পর দেখছেন উনি আমাকে।আমি যে বেথা পাচ্ছি সে দিকে কোনো খেয়ালি নেই ওনার।মনে হচ্ছে নিজের ভেতরে নেই উনি।হঠাৎ করেই উনার ঠোটজোড়া আমার কপাল ছুঁয়ে গেলো, আর উনি মনের অজান্তেই বলে ফেললেন খুব ভালোবাসি তোমাকে, খুব ভালোবাসি।সেই ছোটবেলা থেকে।বলে উনি আবার আমার কপালে চুমু দিতে গেলেন সাথে সাথে আমি ওনার গালে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলাম। চড় খেয়ে মনে হলো উনি নিজ জগতে ফিরলেন। আমি বুঝতে পারলাম উনি নিজের ভেতরে ছিলেন না।আসলে এই অাঁধার আর এই আবহাওয়া তাকে যেনো সত্যি বলার অনুপ্রেরনা দিয়েছে। কোমরে এত বেথা কিছু বলার বা করার কোনো শক্তি নেই আমার। না হলে আজ আরো চড় দিতাম ওকে।

চড় খারাব সাথে সাথে শুভ ভাই যেনো ঘোর কেটে কিছুটা দুরে ছিটকে গেলো নিজে থেকে।

আমি-শুভ ভাই আপনি নিজেকে এর পরেও একজন মানুষ বলে দাবি করবেন?আপনি ফাকা বাড়িতে একটা মেয়েকে একা পেয়ে ছিঃ ছিঃ।(কাঁদছি আর বলছি আমি)।

শুভ-বিলিভ করো সেজুতি। আমি জানিনা আমার কি হয়েগেছিলো।আমাকে ক্ষমা করে দাও সেজুতি প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।(শুভ ভাই কাঁদছেন)

আমি-বেরিয়ে যান এখুনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান বলছি।
শুভ ভাই-প্লিজ সেজুতি ক্ষমা করে দাও আমাকে।
আমি- আমার পা ছাড়ুন বলছি, ছাড়ুন। ক্ষমা করে দিলাম যান।তবে কখনো আর আমার সামনে আসবেন না।

শুভ -ঠিক আছে সেজুতি তুমি না চাইলে আসবো না।একটা কথা বলবো,আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি সেজুতি, ভীষন ভালোবাসি ভীষন।রোজ কলেজ যাবার সময় আমি তোমাকে ফলো করতাম।
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চায় সেজুতি।

আমি-এই আপনার ভালোবাসার নমুনা।আমাকে একা পেরে,,,,,,, আপনি বেরিয়ে যান এখুনি এখান থেকে।যান বলছি।
শুভ ভাই মাথা নিচু করে বের হয়ে গেলেন আমার রুম থেকে।
আর আমি জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।রাফিনের ডায়রিটা আমার বালিশের নিচে ছিলো।সেটা বের করে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।
আমি একটুও অবাক হয়নি। ওনি যে আমাকে ভালোবাসে সেটা আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম।কবি বলেছেন “মেয়েেদর তৃতীয় নয়ন থাকে, কেউ তার প্রেমে পড়লে সেটা সে চট করে ধরে ফেলতে পারে।”

শুভ ভাই চলে গেলো।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম বড় আপু দাড়িয়ে আছে।তাহলে কি আপু সব শুনে ফেললো?
আমি-আআআআআআআপু তুৃিম কখন এলে।(আমি ভয়ে ভয়ে)

আপু-সেজুতি তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
আমি-হ্যাঁ বলো আপু।
আপু-দেখ সেজুতি শুভ খুব ভালো একটা ছেলে। ও তোকে ভালোবাসে সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম।আমি ওকে বলেছিলাম আজ আমরা কেউ বাসায় থাকবো না ও যেনো তোকে সবটা বলে।শুভোর বাবা মা ও চাই তোকে শুভোর সাথে বিয়ে দিতে এমনকি আমাদের বাবা মায়েরো সেটাই ইচ্ছা।
আমি-কিন্তু আপু,,,,,,
আপু-দেখ তুই যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে।তুই যদি শুভোর কোনো খারাপ দিক আমাকে দেখাতে পারিস তো আমি এই বিয়ে আটকাবো।কথা দিলাম।তবে আমার মনে হয় না তুই শুভোর কোনো খারাপ দিক খুজে বের করতে পারবি।কারন শুভ ভালো একটা জব করে,ও অনেক বড়লোক ফ্যামিলির ছেলে।ও ওর বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে, ওকে আমরা ছোট থেকে দেখছি।দেখতে শুনতে খুবি ভালো।আর সবথেকে বড় কথা ও তোকে ভালোবাসে।ভেবে দেখ তুই ।তুই যদি রাজি থাকিস তবে বাবা মা আমার Engagement এর দিন তোর আর শুভোর Engagement ও সেরে ফেলবে।
আপু কথা গুলো বলে চলে গেলো। আমি ঐ দিন সারাটা রাত ঘুমাতে পারিনি এসব চিন্তাই।
সকালে আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে ব্রেকফাস্ট করতে যাচ্ছি দেখি শুভ, ও আমাকে দেখে মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে গেলো একবারো তাকালো না আমার দিকে।আমি খাওয়া শুরু করলাম ঠিক তখনি মা এসে পাশে বসলো।এসে আমার মাথাই হাত বুলাতে বুলাতে আপু কাল রাতে যে কথা গুলো বলেছে মাও ঠিক সেই কথা গুলোই বললো।
আবার চিন্তাই পড়ে গেলাম আমি।কি করবো,যে মানুষটাকে ভালোবাসি সে তো আমাকে ভালোইবাসলো না,আমি বুঝি ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট কতটা।
যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসে তাকেও যদি আমি একি কষ্ট দেই তাহলে রাফিন আর আমার মাঝে পার্থক্য কি থাকলো?

অনেক ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
পরেরদিন শুভ আমাকে আর আমার আপুকে সপিং করাতে নিয়ে গেলো।শুভকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষন খুশি ও।হবেই বা না কেনো ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়ার ভেতরে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।
শুভ ১৫ মিনিট ধরে মেনুকার্ড হাতে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।খাবারি পছন্দ হচ্ছে না ওর।পরে খেয়ল করে দেখলাম মেনুকার্ড দেখা তো একটা বাহানা মাত্র ও মেনুকার্ডের উপর দিয়ে আমাকে দেখছে।আর আপু সেটা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।আপু হঠাৎ করে শুভোর হাতথেকে মেনুকার্ডটা কেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করলো,
আপু-শুভ বলছি যে,তুই না হয় কারো মুখ দেখে পেট ভরছিস তো আমাকে কেনো না খাইয়ে রেখেছিস?কিছু অর্ডার করবি নাকি।এভাবেই বসে থাকবি?
শুভ আপুর কথা শুনে কিছুটা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো”তোমরা অর্ডার দাও।
আপু মেনুকার্ডটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।আমি বললাম ‘আমি কিছু খাবো না আপু তোমারা অর্ডার করো।’
আপু-থাক তোদের আর অর্ডার করতে হবে না করছি।
তাই বলে আপু উঠে গেলো খাবার অর্ডার করতে।

শুভো-সেজুতি।
আমি-জ্বী বলুন।
শুভ-আমাকে ক্ষমা করেছো তো?
আমি-(চুপ করো রইলাম)।
শুভ-চুপ করে আছো যে?
আমি-(আবারো চুপ আমি)
শুভ-দেখো সেজুতি বিয়ের পর আমি তোমাকে খুব ভালোবাসবো।কোনো অভিযোগ করার সুযোগ দেবো না।তুমি যে বিয়েতে রাজি হয়েছো শুনে আমি যে কতটা খুশি হয়েছি জানোনা।আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দেবো না,প্রমিজ।(আমার হাতে হাত রেখে বলছে শুভ ভাই)।
আমি হাতটা আস্তে করে সরিয়ে নিলাম ।
শুভ-সেজুতি তুৃমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো?
আমি-হ্যাঁ আমি,,,,,
আমি বলার আগেই আপু চলে আসলো আমার আর বলা হলো না,বলতামি বা কি?যার কথা বলবো সেতো আর আমাকে ভালোবাসে না।থাক বরং শুভ আমাকে নিয়ে সুখি হতে চাইলে হোক।যে ভালোবাসা আমি পাইনি,সেই ভালোবাসা থেকে আমি শুভকে কেনো বঞ্চিত করবো।থাক না, কিছু কথা একান্তই আমার নিজের হয়ে থাক।কেউ না হয় না জনালো।

আমরা বাড়িতে ফিরে এলাম।
এভাবে দুটো দিন কেটে গেলো,আজ সন্ধাই আমাদের দুবোনের Engagement।বাড়ি ভর্তি মানুষ, শুভোকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।প্রায় সন্ধা হয়ে এসেছে।আমি সাওয়ার নিয়ে, বের হয়ে যা দেখল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *