অপেক্ষা

অপেক্ষা !! Part- 02

কলেজ টাইম শেষ হয় ২টার সময়।আমার বাসায় ফিরতে ২.৩০বেজে গেলো।আজ হেটেই বাসায় ফিরেছি।বাসায় ফেরার সময় মনে হচ্ছিল কেউ ফলো করছে আমাকে।মন ভালো না তাই ভালো করে খেয়াল করিনি। বাসায় ফেরার পর দেখলাম আপু রেডি হচ্ছে।

-কোথাই যাচ্ছ আপু?
-আর বলিস না রাফিনকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে যাচ্ছি।বললাম যাবোনা ও শুনলোই না।বললো ওর সব ফ্রেন্ডস ওকে ছাড়তে না গেলে ও নাকি যাবেই না।এর কোনো মানে হয় বল।আমরা সব ফ্রেন্ডস যাবো একসাথে।তুই ফ্রেস হয়ে নে যা।আমি রেডি হতে লাগি।ফ্রেস হয়ে তুই ও রেডি হ জলদি।
-আমি?
-হ্যাঁ তুই।
-আমি কেনো রেডি হবো?
আপু-ওমা, আমি তো জানতাম রাফিন তোরো ফ্রেন্ড , তো তুই যাবি না?ঠিক আছে না গেলে নাই,আমি একাই চলে যাবো তবে(কথাটা বলে আপু মুচকি হাসি দিলো)।
আমি-তুমি হাসছো কেনো আপু?
আপু-কই হাসলাম। যদি যেতে চাস তো ১৫ মিনিটের ভেতর রেডি হবি।
-আমি আর কথা বাড়িয়ে রেডি হতে চলে গেলাম।ও ভালো নাইবা বাসুক আমিতো ভালোবাসি ওকে।আর কবে দেখা হবে তার ঠিক নেই,কোনোদিন হয়তো আর দেখাই হলোনা।
আপু-সেজুতি হলো তোর?(আপু ডাকছে, ও আমার নামটাই তো বলা হয় নি,আমি সেজুতি,আর ও আমার বড় বোন বিথি, রাফিন বিথি আপুর ক্লাসমেট)।
আমি-আসছি আপু।
আপু-কিরে বললি যাবি না।এখন দেখছি সেজেই যাচ্ছিস, বেপার কি বলতো আমার কোনো ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়লি নাকি আবার,হুম?
-কি যে বলো আপু, এমন করলে কিন্ত যাবোনা আমি দেখো।
-হ্যাঁ সেতো দেখতেই পারছি।চল এখন জলদি।ওরা সব রাইরে গাড়িতে ওয়েট করছে।
-ওরা, কে কে?
-আরে রাফিন দুইটা গাড়ি নিয়ে এসেছে।
-মানে রাফিন ভাইয়াও আছে গাড়িতে?
-মনে হয়।চলতো গিয়ে দেখি।
-আপু তুমি যাও আমি আসছি।
-আচ্ছা জলদি আই।
নিচে গিয়ে দেখি আপু অলরেডি গাড়িতে উঠে বসে আছে।গাড়ি পুরো ভরা কেউ একজন আমার হাতটা টান দিয়ে ভিতরে বসালো।পরে খেয়াল করলাম ওটা রাফিন।শেষ মেষ ওর পাশে বসলাম। আমার কপালটাই খারাপ, না জানি আবার কি বলে অপমান করে।ধুর ভাললাগেনা।
রাফিন-কিরে সেজুতি এত সেজেছিস যে?বিয়ে বাড়ি যাচ্ছিস নাকি? (বলে হেসে দিলো)।
-আসলে এই লোকটা সবসময় আমাকে অপমান করার জন্যে রেডি হয়ে থাকে।
আমি-আপু আমি যাবো না।গাড়ি থামাও।
আপু-আরে তোর কি মাথা খারাপ নাকি।এখন গাড়ি কিভাবে থামাবে।তাহলে রাফিনের দেরি হয়ে যাবে।চুপ করে বসে থাক তুই।
আমি-তাহলে আমি পেছনে বসবো তুমি এখানে এসে বসো।
আপু-আরে চুপ করে সব তো,আর অল্প একটু পথ। চলে আসছি প্রায়।
তাকিয়ে দেখি রাফিন মুচকি হাসছে।ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না।আমরা এয়ারপোর্ট পৌছে গেলাম।সবাই এক এক করে নেমে গেলো।আমি আর রাফিন পাশাপাশি।সবাই নেমে এক সাইডে দাড়ালো আমি যেই উঠতে যাবো ওরনাই টান লেগে রাফিনের কোলের উপরে পড়ে গেলাম।রাফিন সাথে সাথে আমাকে উঠিয়ে দিয়ে বকা দিতে লাগলো,দেখে উঠতে পারিস না, কানা নাকি তুই।
-আমার ওরনা আপনার পায়ের নিচে আটকে আছে।
-ও সরি সরি,আমি আসলে,, ,,
-থাক হয়ছে ওরনাটা ছাড়ুন।
আমার খুব খারাপ লাগছিলো।এই লোকটা আগে তো এমন ছিলো না,যেদিন থেকে উনাকে প্রপোজ করেছি সেদিন থেকে সবসময় যেনো আমাকে অপমান করার জন্য বাহানা খুজে।দাম বেড়ে গেছে মনে হয়।

রাফিন চলে গেলো,মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা ফাকা ফাকা লাগছে।
যে মানুষটা আমাকে দেখতেই পারে না তার জন্য কেনো এত হাহাকার বুকের ভেতর।মনে হয় এটাই ভালোবাসা।
আমি আর আপু বাড়িতে ফিরে এলাম।রাতে আপুর সাথে ঘুমাই আমি।ভেবেছিলাম আজ রাতে চুরি করে রাফিনের ফোন নাম্বার নিবো আপুর ফোন থেকে।
পরে ভাবলাম না থাক। ফোন দিলে হয়তো আবার অপমান করবে।তারচেয়ে বরং আমি একাই ভালোবাসবো তাকে।ভালোবাসলেই যে পেতে হবে তার তো কোনো মানে নেই।
রাফিনের দেওয়া অনেক উপহার আছে আমার কাছে।দুইটা কলম,একটা ডায়েরি,এবং একটা গোলাপ।এগুলো রাফিন আমাকে আমার জন্মদিনে গিফট করেছিলো।গোলাপ টা ডায়েরির ভাজে রেখে দিয়েছি। যেই ভাজে রেখেছি সেখানে অনেক বড় বড় অক্ষরে লিখে রেখেছিলাম,”আমি তোমাকে ভীষন ভালোবাসি রাফিন”।ডায়েরিটা সবসময় নিজের কলেজ ব্যাগেই রাখতাম, যাতে কারো হাতে না পড়ে।
এভাবে সময় চলে যেতে লাগলো।যত সময় যেতে লাগলো পড়াশোনার চাপ বাড়তে লাগলো।একটা সময় রাফিনের কথা খুব কম মনে পড়তে লাগলো,পড়ার চাপে।তবে ভুলে যাই নি।রোজ রাতে ওর দেওয়া ডায়রিটাতে লিখতে ভুলিনা।”আমি তোমাকে ভীষন ভালোবাসি রাফিন”।
এভাবে একটা বছর কেটে গেলো,রাফিন চলে গেছে আজ এক বছর।পড়ার চাপ বেড়ে গেছে।তাই অনলাইনে তেমন আসা হয় না।আজ এক সপ্তাহ পর অনলাইনে আসলাম।অনেক গুলো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে।তার পর যা দেখলাম দেখে চোখ আমার কপালে উঠে গেছে।দেখলাম রাফিন ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে।
আমি আগে অনেক খুজেছি ওর আইডি তবে পাইনি।আগে একটু লুঙ্গী ডান্স দিয়ে নেই তারপর একসেপ্ট করবো রিকু।

সন্ধার পর রাফিনের রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলাম।করে পড়তে বসেছি।কিন্ত পড়াই মন বসছে না।তাই ওর ছবিগুলো দেখতে লাগলাম ওর আইডিতে ঢুকে।
কিন্ত যা দেখলাম দেখে মাথাই আগুন ধরে গেলো,উনি লেখাপড়া বাদ দিয়ে প্রেম করতেছেন ওখানে।সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে ছবি আর ছবিতে ভরা তার টাইমলাইন।

হঠাৎ টুং করে একটা ম্যাসেজ আসলো।দেখলাম রাফিন।
রাফিন-হাই
আমি-হ্যালো
রাফিন -কিরে কেমন আছিস?
আমি-আছি ভালোই।অনেক ভালো আছি।আপনি?
রাফিন-হ্যাঁ আমিও অনেক ভালো আছি।
আমি-হ্যাঁ জানি।
রাফিন -কিভাবে জানলি?আচ্ছা বাদ দে,তোর ভাবিকে দেখেছিস?কেমন বল তো?
আমি-ভাবি কে?
রাফিন -আরে আমার গফ।ওয়েট ছবি দিচ্ছি।
আমি-না থাক লাগবে না।দেখেছি।(আমাকে কষ্ট দিয়ে এই লোকটা মনে হয় পৈশাচিক আনন্দ পাই)।
রাফিন-ও আমাদের কলেজের সব থেকে সুন্দরী মেয়ে।
-আমি আর কিছু বললাম না, না বলে সাথে সাথে ব্লক মেরে দিলাম ওকে। মনে মনে জিদ হলো আমার আমি তোর গফ এর চেয়েও বেশি সুন্দরি হয়ে দেখাবো।একদিন তুই ঘুরবি আমার পিছে দেখিস।মনের ভেতর প্রচন্ড জিদ চেপে বসলো সুন্দরী হবার।জানি যদিও কাজটা সহজ না তবুও।যেই ভাবা সেই কাজ।নিজের প্রতি যত্ন নিতে শুরু করলাম।রাফিনকে যখন প্রপোজ করেছিলাম বেশ ছোট ছিলাম তখন,কেবল যৌবনে পা দিয়েছি।তখন বুঝতাম না কিভাবে নিজেকে পরিপাটি রাখতে হয়।কিভাবে থাকলে নিজেকে দেখতে ভালো লাগে।
এখন বুঝি এবং নিজেকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলেছি।রাফিনো হয়তো চিনতে পারবে না আমাকে দেখে।নিজেকে নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে কিভাবে চখের পলকে ৫ টা বছর কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।রাফিন এখনো ফেরেনি দেশে। ও প্রায় ফোন করে আপুর কাছে, আমি পর্দার আড়াল থেকে ওদের কথা শুনি লুকিয়ে লুকিয়ে।

এখন আর রাফিনকে তেমন একটা মনে পড়ে না,কারন ও অন্য কাউকে ভালোবাসে আর এখন ওর মত অনেক ছেলে আমার পিছে ঘুরে,তবে ভুলে যাইনি,প্রথম ভালোবাসা ও আমার,আজো আমি মনে মনে ওর জন্য অপেক্ষা করি।এদিকে বড় আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামি মাসে।
বললে হয়তো বিলিভ করবেন না আমি সত্যি গত ৫ বছরে কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছি।বাবা মা শুধু ভাবেন আমার এই পরিবর্তনের কারন কি?বাড়িতে আপুর বিয়ের তোড়জোড় চলছে ভীষন ভাবে।

এর ভেতরে একটা ঘটনা ঘটেছে সেটা তো আপনাদের বলাই হয়নি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আপুর বিয়ের ৩মাস পর আমার বিয়ে।ছেলে আপুরি এক ফ্রেন্ড।তার একটা কাহিনি আছে,রাফিন চলে যাবার পর একটা ছেলে আমাকে সবসময় ফলো করতো,,,

চলবে,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *