অপেক্ষা !! লেখাঃ আতিকা জাহান
অপেক্ষা !! লেখাঃ আতিকা জাহান
বিয়ে করবে আমাকে?
“উওরে সে বলেছিলো নিজের চেহারা দেখেছিস আয়নায়?আমি হলাম এই কলেজের সব থেকে সুন্দর ছেলে।আমার পিছে কত মেয়ে ঘুরে জানিস?কাউকে পাত্তাও দেই না,আর বিয়ে করবো তোকে?দেখ তোকে যে বান্ধবি বানিয়ে সাথে রেখেছি এটাই তোর ভাগ্য।বাচ্চা মেয়ে একটা।
আমি মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম, কোনো কথা বলিনি,কারন সত্যি ওর মত সুন্দর ছেলে আমাকে কেনো বিয়ে করবে?কত সুন্দরি মেয়ে ওর পিছে ঘুরে।
কিছু বলিনি ঠিকি তবে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। বুকের ভেতরটা যেনো খাঁ খাঁ করছিলো।বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে সেদিন সত্যি আয়নায় নিজেকে অনেকক্ষন দেখেছিলাম আর কেঁদেছিলাম।আর ভেবেছিলাম কালো হয়ে জন্মানো কি পাপ?
আমি এমনিতে তেমন সাজগোজ করতাম না, পার্লারে যাইনি কখনো।বাবা বলে আমার চেহারা নাকি খুব মায়াবি। এই কথাটা যখন শুনি তখন আমার ভিষন হাসি পাই।
(বিঃ দ্রঃ “অপেক্ষা ! লেখাঃ আতিকা জাহান ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
যে ছেলেটাকে বিয়ের কথা বলেছিলাম সে আমার থেকে বেশ বড়,সে যখন অনার্স ৩য় বর্ষে আমি তখন কেবল ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্রী।আমার বোনের ক্লাসমেট ছিলো সে।প্রায় বসায় আসতো কথা বলতে বলতে একটা সময় বন্ধুত্ত হয়ে যায়।
ওর নাম রাফিন।খুব ভালোলাগতো ওকে আমার।ভালোবেসে ফেলেছিলাম ওকে আমি প্রচন্ড।যদিও এর আগে কখনো বলিনি ওকে আমি।এখন মনে হচ্ছে, না বলাটাই বোধহয় ভালো ছিলো।আপুরা সবাই ঘুরতে গেছিলো তাই আমাকেও নিয়ে গেছিলো,এক সময় রাফিন দেখি একা দাড়িয়ে আছে, তখনি আমি কথাগুলো বলেছিলাম রাফিন কে।এতটা অপমানিত হতে হবে ভাবিনি।রাফিন আমার বোনের খুব ভালো বন্ধু। তাই ভয় লাগছিলো রাফিন আপুকে বলে না দেয়।রাফিনকে আমি আগে ভাইয়া বলে ডাকতাম।তারপর ও একদিন বললো আমারা যেহেতু ফ্রেন্ড তাই নাম ধরে ডাকতে।
আমি খুব খুশি হয়েছিলাম ঐ দিন যেদিন ও আমাকে ওকে ‘তুমি’ বলার পারমিশন দিয়েছিলো।
মনে মনে ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাকে পছন্দ করে।আসলে ওঅনেক বড়লোক ফ্যামিলির ছেলে। তাই ভয়ে কখনো কিছু বলতাম না।আমার মতো কালো মেয়েকে কে ভালোবাসবে ও।
এর পর থেকে রাফিন কখনো আমাদের বাসায় আসলে আমি ওর সামনে যেতাম না। আড়াল থেকে দেখতাম ওকে। ও খুব হাসতো।ওর ঐ হাসির জন্যেই আমি ওর প্রেমে পড়েছিলাম।
হঠাৎ একদিন আপু বললো রাফিন নাকি বিদেশ চলে যাবে পড়ালেখার জন্য।শুনে ভিষন কষ্ট লাগছিলো,এতদিন যাও একটু দেখতে পাচ্ছিলাম তাও হয়তো আর হবে না।বুকের ভেতরটা ফাকা ফাকা লাগছিলো। খুব কান্না পাচ্ছিল।যে মানুষটা আমাকে এত অপমান করলো তার জন্যে কেনো যে এত খারাপ লাগছে বুঝিনা।
পরেরদিন কলেজে যাবো তাই রেডি হচ্ছি ঠিক তখন কলিং বেল বেজে উঠলো।
-আসছি,বলে দরজা খুলতে গেলাম দরজা খুলে আমিতো একদম অবাক, রাফিন আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে চলে যাবো ঠিক তখনি রাফিন আমার হাতটা টেনে ধরলো।
আমি-হাত ধরলেন কেনো?ছাড়ুন আমি আপুকে ডেকে দিচ্ছি।
রাফিন-আপনি কেনো বলছিস?আজকাল তোকে যে দেখাই যাই না।ঐ দিন যে কথাগুলো বলেছিলাম তার জন্যে কি এখনো রেগে আছিস নাকি? দেখ তুই আমার ছোট, তারথেকে বড় কথা আমার সাথে তোর যাই না।আমি যদি তোর মত একটা মেয়েকে বিয়ে করি তো লোকে কি বলবে বল।আমার ফ্যামিলির সম্পর্কে কোনো ধারনা আছে তোর? আমি একটা কালো মেয়েকে বিয়ে করেছি,সবাই শুনলে হাসাহাসি করবে।তুই এসব কথা আর কখনো বলবি না প্লিজ।বান্ধবী বান্ধবীর মত থাক।কিছু মনে করিস না প্লিজ।
আমি-হাত ছাড়ুন।আমার ওসব কিছুই মনে নেই।আমি কলেজে যাবো।হাত ছাড়ুন।
রাফিন-তোর আপুকে ডেকে দে।আসলে আমি আজ বিকালে চলে যাবো তাই আন্টিদের সাথে দেখা করতে এসেছি।ভালো থাকিস তুই।দেখিস তোর খুব ভালো একটা বর হবে।
আড়াল থেকে শুনলাম রাফিন ৫বছরের জন্য বিদেশ যাচ্ছে।মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো,কলেজ যাইনি সেদিন আর।একটা পুকুরের ধারে বসে ছিলাম কলেজ টাইম শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
আমি কি আসলে রাফিনকে ভালোবাসি?নাকি এটা ওর প্রতি আমার মোহ।এসব ভাবছিলাম বসে বসে।আর নিরবে কাঁদছিলাম।
-অপেক্ষা-
প্রথম তাই কোনো ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।
.
.
চলবে….. অপেক্ষা …