অন্ধপ্রেম

অন্ধপ্রেম !! Part- 51

রাজ শীতলকে বার বার বলছে ডোর ওপেন করতে…রাজ শীতলকে কিছুই করবেনা বলার পরেও শীতল ভয়ে ওপেন করছেনা ডোর…
রাজ জোরে লাথি দেওয়াতে ডোর খুলে গেলো…
রাজ শীতলকে দেখা মাত্রই রাজের সব রাগ চলে গেলো…
রাজ শীতলের হাত ধরতেই শীতল আচমকা ভয়ে পাশে থাকা ফুলদানি রাজের মাথায় মারলো…
রাজ নিজের মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো…
সে ভাবতেও পারেনি শীতল এমন কাজ করবে…
শীতলও ভাবতে পারেনি সে এমন করবে…
শীতল খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো তাই রাজকে আঘাত করেছে…
.
.
.
শীতল আবারও ওয়াস রুমের দরজা ক্লোজ করে দরজায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো…
রাজের মাথা থেকে রক্ত পড়ছে টুপ টুপ…
রাজ শীতলের নাম ধরে কয়েকবার ডাক দিলো…
রাজ বললো…
_শীতল প্লিজজজ ডোর ওপেন করো…
আমাকে ভয় পাচ্ছো কেনো ???
আমি কি বাঘ না ভাল্লুক ???
তুমি আমাকে আঘাত করেছো তাতে কিছু মনে করিনি…
দরকার পড়লে আরো করবে…
এখন আমার কাছে এসো প্লিজজজজ…
শীতল তবুও ডোর ওপেন করলোনা…
.
.
.
রাজ তার একটা হাত দরজার মাঝখানে রাখলো…
রাজের মনে হচ্ছে শীতলও এই খানে হাত রেখেছে…
শীতলও একই কথা ভাবছে…
বেশ রাত হয়েছে…
রাজের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে শীতল ডোর ওপেন করলো…
শীতল ডোর খুলতেই দেখলো কিছু রক্ত ফ্লোরে সেই সাথে ওয়াস রুমের দরজায় রক্ত লাগানো হাতের ছাপ..
শীতলের মনে বেশ কষ্ট শুরু হলো…
তখন শীতলের কি হয়েছিলো তা শীতলও জানেনা…
সে হঠাৎ রাজকে আঘাত না করলেও পারতো…
.
.
.
রাজের রক্ত দেখে শীতলের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো…
শীতল রাজকে কোথাও দেখছেনা…
এই অবস্থায় কোথায় গেলো রাজ…
হঠাৎ শীতল রাজকে দেখতে পেলো…
বেডের মাঝখানে রাজ সেন্সলেস হয়ে শুয়ে আছে…
মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে…
শীতল দৌড়ে গিয়ে রাজের বুকে মাথা রাখলো…
শীতল কাদতে কাদতে বললো…
_বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে আঘাত করতে চাইনি….
আপনার উপর আমার খুব খুব রাগ হয় …
আপনি এতো অপমানের পর কেনো আমাকে ভুলে যাচ্ছেন না…
আমি আপনাকে দুঃখ ছাড়া কিছুই দিতে পারবোনা…
.
.
.
শীতল রাজের মাথায় বেন্ডেজ করে দিলো…
তারপর তোয়ালে দিয়ে শীতল রাজের শরীর মুছে দিলো পানিতে…
.
.
.
শীতল রাজের রাজের বুকে মাথা রেখে সেই সত্য গুলো বললো রাজকে যা রাজ জেগে থাকলে শীতল কখনোই বলতে পারতো না…
শীতল কেনো রাজের সাথে এমন করছে তা সব নিজের মনে কখন বলে ফেললো তা সে নিজেই জানেনা…
.
.
.
শীতল তার পরিবারের জন্য এমন করতে বাধ্য হচ্ছে…
শীতল তার পরিবারে খুনি হতে চায়না…
সে সবাইকে কষ্ট দিয়ে রাজের সাথে সুখে থাকতে চায়না…
রাজকে শীতল এভাবে দেখতে পাচ্ছেনা তাই শীতল দেশ ছেড়ে চলে যাবে দূরে কোথাও…
.
.
.
শীতল খুব কাদলো…
তারপর রাজের ঠোটে হালকা একটা চুমো দিয়ে শীতল বারান্দায় চলে এলো রাজ যেনো জেগে না যায়….
রাজ জেগে থাকলে রাজের ভীষন কষ্ট হয় শীতলকে কাছে না পেয়ে …
এটা শীতল বুঝতে পারে…
.
.
.
শীতল বারান্দায় এসে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়লো…
ঘুমানো অবস্থায় শীতলের বেশ শীত শীত লাগলো…
তখন হঠাৎ সে কারো গরম ছোয়া পেলো…
.
.
.
ভোর হয়েছে শীতল চোখ খুলে নিজেকে বেডে দেখতে পেলো…
নিজের দিকে তাকিয়ে শীতল অবাক হলো…
শীতলের পরনে নতুন একটা শাড়ি…
শীতলের বেশ মনে আছে কাল রাতে সে শাড়ি পরা ছিলোনা…
.
.
.
শীতল পাশে তাকিয়ে রাজকে দেখলোনা …
রাজ অনেক আগেই চলে গিয়েছে…
শীতল দেখলো রুমটা আগের মতো ক্লিন…
বেডের একপাশে কিছু ব্রেকফাস্ট আর একটা চিঠি দেখতে পেলো সে…
শীতল চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করলো…
.
.
.
Good morning my beautiful Darling wife .
আমি একটু বাহিরে গেলাম ছোট একটা কাজে…
কাজ সেরেই তোমার কাছে ফিরে আসছি…
আমাকে বেশি ক্ষন মিস করতে হবেনা তোমায়…
আর হ্যাঁ ব্রেকফাস্ট করে নেবে ভালো মেয়ের মতো…যদি ব্রেকফাস্ট না করো তাহলে ফিরে এসে আমার স্টালে খাওয়াবো…

তোমাকে শাড়ির জন্য টেনশন করতে হবেনা…আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছি…
তুমি নিজের খেয়াল রেখো..
Love you 💓💓💓💓💓
.
.
শীতল চিঠিটা পড়ে কান্না শুরু করলো…
রাতেই শীতলকে রাজ এখানে নিয়ে এসেছে আর এসব কিছু ক্লিন করে তাকে শাড়ি পরিয়েও দিয়েছে রাজ…
কাল এতো বড় অপমান করলো রাজকে …আঘাত পর্যন্ত করেছে রাজকে শীতল…
সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো কিভাবে রাজ…
রাজ এতো কিছুর পরেও এতো ভালোবাসে কেনো তাকে…
এই লোকের কি ইগো বলতে কিছুই নেই…
শীতলের ভাগ্য এমন যে রাজের মতো স্বামী পেয়েছে…
কিন্তু ভাগ্য এমন যে সেই স্বামীকে সে ধরে রাখতে পাচ্ছেনা…
শীতল ভাবছে উপরওয়ালা যদি একটা মিরাক্যাল করে রাজের সাথে তাকে মিলিয়ে দিতো…
যদি তার বাবা মা ভাইয়া নিজে থেকে শীতলকে রাজের হাতে তোলে দিতো…
শীতল মনে মনে আল্লাহর কাছে এমন পার্থণা করে সব সময়…
.
.
.
.
কাজল লাল শাড়ি পরে বসে আছে…হিমালয় মেচিং করে পান্জাবি পরেছে কাজলের সাথে…
সামনে কাজি বসে আছে…
হিমালয়ের লোকও আছে চারপাশে…
হিমালয় একটা পুরোনো বাংলোতে নিয়ে এসেছে কাজলে ময়মনসিংহের…
কাজলের চোখ থেকে পানি পড়ছে…
হিমালয় কাজলের কানে কানে বললো…
_এখন যত ইচ্ছে কেদে নাও বাবু…পরে আর কাদতে পারবেনা…
একটু পরে তুমি আমার বউ হবে…
আমাদের ফুলসজ্জার পরে সব ঠিক হয়ে যাবে…
কাজল রেগে হিমালয়ের দিকে তাকালো…
হিমালয় মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করলো…
.
.
.
কাজি সাহেব কাজলে বললো কবুল বলতে…
হিমালয় কাজলকে বলেছে যদি সে কবুল না বলে তাহলে কাজি কে সুট করা হবে…
কাজল কি করবে বুঝতে পাচ্ছেনা…
.
.
.
কাজল যখন কবুল বলতে নেবে তখনি কেউ দরজায় আঘাত করলো…
সবার দৃষ্টি দরজায় পড়তেই রাজকে দেখতে পেলো…
রাজের দুই হাতে দুটো রিবালবার ছিলো…
রাজ রাগি গলায় বললো…
_হিমালয় গেইম ইজ ওভার…
তোর এই গেইম অফ এন্ড ফিনিস…
তুই ছোট থেকেই অত্যন্ত ক্লেভার ছিলো…সেটার অপব্যাবহার করে তুই সব সময় সবাইকে বিপধে ফেলতি….
এজন্যই তোর একটা চোখ হাড়াতে হয়েছে…
.
.
.
তোর খেলা শেষ হিমালয়…
কাজল সাথে সাথে রাজের কাছে আসতে চাইলো তখনি হিমালয় কাজলে জরিয়ে ধরলো..
কাজলে হাত ধরে হিমালয় বললো…
_তুই আমাকে নিজের থেকে বেশি চালাক ভাবিস রাজ…
তোর এই কারণে এই অবস্থা আজ…
নিজের ওয়াইফকে হাড়াতে বসেছিস তোর বোনকে তো আগেই হাড়িয়েছিস…

বাট আমি আমার ওড বি ওয়াইফকে হাড়াবো না…
এখানে সব আমার লোক…
তুই চাইলেও একা কিছুই করতে পারবিনা…
রাজ কিছুটা হেসে বললো…
_একবার ভেবে দেখতো…আমি তোর গেইম জানলাম কি করে???
আর এখানে এলাম কি করে…
???
হিমালয় ভাবলো…ঠিক তো রাজ তার গেইম গুলো জানলো কিভাবে…
রাজ সোফায় পা তোলে বসলো…
_শোন হিমালয়….কাজল ময়মনসিংহে আসার পরেই আমি ওর পেছনে সিক্রেট গার্ড লাগিয়ে ছিলাম যেটা কাজল নিজেও জানতোনা…
কাজল আমার পরিবারে একটা অংশ…
তাই ওকে নিয়ে কোনো বিজনেস ম্যান আমাকে ট্রেপে ফেলতে পারে…
আমি সব সময় ফ্যামিলি আর বিজনেস কে আলাদা রেখেছি…
যাইহোক আমাকে সিকিউরিটি কাল জানিয়েছে কাজল একটা রেস্ট্রোরেন্টে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছে…
আমাকে ভিডিও ফুটেজ দেখানোর পর আমি তোকে দেখতে পেলাম…
আমি ততক্ষণাক কাজলের বাংলো তে গিয়েছিলাম…
কাজলকে ফোন করতেই আমি তোর আওয়াজ শুনতে পেলাম…
তোর মুখে তুই কাজলের সাথে তোর গেইমের খেলার কথা বলেছিস…
সবকিছু তখন বুঝতে পারলাম…
তুই আমাকে প্ল্যান করে হারিয়ে দেওয়ার জন্য এসব করেছিস…
বাট তোর প্ল্যান এখানেই শেষ…
আমি কাল পার্সোনাল কাজে বিজি ছিলাম তাই সকাল হতেই তোকে শাস্তি দিয়ে কাজকে নিতে এসেছি…
পুরো বাড়ি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে…
তোর পালানোর রাস্তা নেই…
তোকে চিটিং আর কিডন্যাপের কেইসে জেলে যেতে হবে…দুঃখিত…
.
.
.
হিমালয় প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে বললো…
_আমি কাজলে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করবো…
তুই কিছুই করতে পারবিনা…
আমার লোকজন রা তোকে তোর জায়গা দেখিয়ে দেবে…
আমি এখান থেকে কাজলকে নিয়ে সোজা লন্ডন চলে যাবো…
.
.
.
হিমালয় কাজলে বার বার বলছে …
আমি তোমাকে ভালোবাসি কাজল…
আমাকে ছেড়ে যেওনা…
কাজল বার বার বলছে সে হিমালয়কে ঘৃণা করে…
.
.
.
রাজকে হিমালয়ের লোকজন আঘাত করছে…
রাজও তাদের পাল্টা আঘাত করছে…
.
.
.
রাজ সবাইকে মেরে তক্তা বানালো…
হঠাত রাজকে পেছন থেকে হিমালয় আঘাত করে…
রাজ আর হিমালয় কেউ কারও থেকে কম যায়না…
দুজন দুজনকে আঘাত করছে…
কাজল চিৎকার করে বলছদ থামুন আপনারা প্লিজজজ…
.
.
.
হিমালয় রাজকে সুট করতে গিয়ে নিজের লোকেদের সুট করে ফেলে…
রাজ মাথায় আঘাত পাওয়াতে ফ্লোরে পরে যায়…
তখনি হিমালয় রাজকে সুট করতে যায়…
হঠাত কাজল সামনে থাকা ফুলদানি দিয়ে হিমালয়ের মাথায় আঘাত করলো…
হিমালয়ের মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে…
হিমালয় আঘাত করতে চেয়েও কাজলকে আঘাত করেনা…
হিমালয়ে রক্ত মাখা হাত কাজলের গালে হালকা টাচ করেই হিমালয় নিচে পরে যায়…
রাজ সেই সুযোগে হিমালয়কে বেশ আঘাত করে…
কাজল হিমালয়ের আঘাত সহ্য করতে পারেনা…
কাজল শাড়ির আচল মুখে দিয়ে শুধু কান্না করতে থাকে চোখ বন্ধ করে…
.
.
.
বাংলোর বাহিরে রাজকে জরিয়ে ধরে কাজল কাদতেঁ থাকে…
হিমালয়কে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে…
হিমালয়কে একটা হিংস্র বাঘের মতো দেখাচ্ছে…
ছাড়া পেলেই যেনো কাজলকে ছিন্ন বিন্ন করে ফেলবে…
হিমালয় কাজলকে উদ্দেশ্য করে বললো…
_কাজল মন থেকে আমাকে ভালোবাসো বাট ব্রেন থেকে আমাকে ঘৃণা করো…
ভেবোনা আমার জন্য…আমি হিমালয়…
আমি এখান থেকে বের হয়ে আসবো তোমার কাছে‌..
কোনো কুকুর আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবেনা…
আমি তোমাকে ভালোবাসি কাজল…
এটা মাথায় রেখো আমো ফিরে আসবো…
রাজ কিছু বলতে চেয়েও বললোনা…

রাজ কাজলের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো…
সব ঠিক হয়ে যাবে…
আর কেদোনা…
রাজ গার্ড নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে গেলো…
নিজে কাজলকে হিমালয়ের নাগালের বাহিরে জাপানের ফ্লাইটে বসিয়ে দিয়ে এলো…
কাজল যাওয়ার সময় এক দম চুপচাপ থাকলো…
তার কানে ভেসে আসছিলো হিমালয়ে কথা গুলো…
হিমালয় কি সত্যিই ফিরে আসবে…
হিমালয়কে সত্যিই কাজলকে পাবে…
.
.
.
রাজ সব ফরমালিটি শেষ করে শীতলের কাছে বাংলোতে গেলো…
সেখানে গিয়ে রাজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো…
পুরো বাংলোকে কেউ যেনো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে…
রাজের বুকে চিন চিন ব্যথা শুরু হলো…
রাজ যা ভাবলো তাই…
শীতল নেই…
শীতলকে কেউ নিয়ে গেছে…
রাজ একটা চিঠি পেলো…
রাজনের চিঠি এটা রাজ বুঝতে পারলো…
রাজন চিঠির শেষে নিজের নাম লিখেছে…
রাজ লিখেছে সে কাজলকে খুব শিঘ্রই বিয়ে করবে…
রাজ্য আর রাজ কন্যা দুটোই রাজ হাসিল করবে…
পারলে রাজ যেনো আটকায়…
.
.
.
রাজ রেগে জোরে জোরে ফ্লোরে ঘুষি দিলো…
এবার রাজের হাত থেকে রাজন বাচবেনা…
.
.
.
.
রাজের মাথায় খুন চড়েছদ গিয়েছে…
সে ড্রাইভ করে রোদদের বাড়ি গেলো…
সেখানেও একই ঘটনা…
ওদের বাড়িও কেউ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে…
ফুলি জানিয়েছে…
রোদ আর তার বাবা মাকে কে যেনো নিয়ে গেছে…
.
.
.
ফুলি কথা বলতে পারলোনা আর …
সে জ্ঞান হারালো…
ফুলির গায়েও চোট ছিলো…
রাজের মাথায় খুন চেপেছে…
সে কি করবে তা ভেবে পাচ্ছেনা…

হঠাৎ রাজের ফোনে একটা এম এ মেস এলো…
রাজ দেখলো ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে রোদকে কেউ মেরে বেধে রেখেছে…
আর রাজন শীতলের হাত ধরে আছে…
শীতল সেন্সলেস হয়ে আছে…
রাজনের সাথে এভাবে শীতলকে দেখে রাজ রেগে নিয়নত্রন হাড়িয়ে ফোন টা ভেঙে গুড়িয়ে দিলো…
.
.
.
রাজ রাজনের কথা মতো একটা জায়গায় গিয়ে 600 বোল্ডের শকড খেলো…
.
.
.
.
চলবে………