অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 08

“কলিং বেলের আওয়াজে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।দেখি ক্ষত বিক্ষত অবস্থা উনি এসে দাড়িয়ে আছে।সাথে বাবাও আছে।উনাকে এমন অবস্থায় দেখে আমি অনেক বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।”

“ধাক্কাটা সামলে নিয়ে কোনমতে বাবা আর আমি উনাকে ধরে ভেতরে আনলাম।উনি ঠিকভাবে চলতেও পারছে না।এইতো কিছুক্ষণ আগে সুস্থ মানুষ বাড়ি থেকে বের হলো তাহলে এমন অবস্থা কিভাবে হলো? কে করলো এমনটা?”
“আমি বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম,”
—“বাবা! তোমার জামাইয়ের এই অবস্থা কে করেছে?”

“বাবা আমায় কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলো,”
—“আর বলিস না মা।স্যার অফিসে আসার আগেই আজকে তপু এসে স্যারের চেয়ার দখল করে নিয়েছে।তারপর অফিসের সব ইমপ্রটেন্ট ফাইলগুলো আগুনে পুরিয়ে দিয়ে আঁধা ঘন্টার মধ্যে সব ফাইল পুনরায় স্যারকে তৈরী করতে বলেছে।স্যার না পারায় অফিসের সকলের সামনে স্যারকে এভাবে মেরেছে তপু।”

“বাবার মুখে কথাটা শুনেই আমি রেগে যায়,”
—“কি? ওই পুচকে তপুর এতো বড় সাহস যে উনাকে এভাবে মেরেছে?ওকে তো আমি…”

“আমি যাবো আর উনি আমার হাতটা টেনে ধরে,”
—“কোথায় যাচ্ছো ইশানি?”
—“আমার হাত ছাড়ুন। যেতে দিন আমাকে। আজ ওকে ওর জায়গা দেখিয়ে দিয়ে আসবো অফিসের সকলের সামনে।”
—“তার কোনো প্রয়োজন নেই এখানে বসো।”
—“নাহ! আজ আপনি আমাকে বাঁধা দিতে পারবেন না।আপনার মতোন সরল মন আমার নয়।আমি যাদের ভালোবাসি তাদের কস্ট সহ্য করতে পারি না।কখনোই না।”
—“বাবা আপনার মেয়েকে শান্ত হতে বলুন।বোঝান ওকে তপু আমার ছোট।প্রথম দিন অফিসে এসে আবেগের বসে ভুল করে বসেছে।”
—“কি? ও আপনার ছোট? আবেগের বসে ভুল করে বসেছে? এটা ভুলনা অন্যায়। এতো সরল কেন আপনি? কেন এতো সহ্য করেন অন্যের অপমান?”
—“ইশানি বুঝতে চেস্টা কর?”
—“কি বুঝবো আমি? আমার কথা কখনো ভাবেন? আমার খুব কস্ট হয় আপনাকে এভাবে অপমানিত হতে দেখলে।কস্ট পেতে দেখলে।আমার জন্য হলেও এবার একটু মাথা উঁচু করে বাঁচুন।আমি পারি না এসব সহ্য করতে।”

“উনি উঠে দাড়িয়ে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় আর বলে,”
—“ইশানি, আমার সাথে থাকতে কি তোমার কস্ট হয়?”
—“এভাবে কেন বলছেন আপনি?”
—“চাইলে তুমি তোমার বাবার সাথে চলে যেতে পারো। আমি চাই না আর এই অশান্তি।”
—“অশান্তি মানে? আমি অশান্তি করছি?”
—“নাহ আমি সেটা বোঝাতে চাই নি।আমি তো শুধু চাই আবার এক হয়ে যেতে।যেন মন থেকে সবাই আমাকে আপন ভাবে।যানি একটু সময় লাগবে কিন্তু এভাবে আমি হেরে যেতে পারবো না।তুমি কি চাও না আমরা আবার একসাথে থাকি?”

“উনার কথাটা শুনে আমি অবাক হই।যেই মানুষটাকে সবাই অপমান করে সে সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে চাই।এতো ভালো কেন এই মানুষটা? আমি উনাকে ঝাপটে ধরে কাঁদি আর বলি,”
—“এমন কেন আপনি? এতো ভালো স্বামী আমার চাই না।একটু খারাপ হন না আমার জন্য।”

“উনি আমায় কিছুই বলে না।একদম নিশ্চুপ হয়ে থাকে।আমি উনাকে নিয়ে সোফাতে বসিয়ে রুম থেকে ব্যাথা জায়গায় লাগানোর জন্য ওষুধ নিয়ে আসি।বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উনাকে দেখে রাখতে বলে চলে যায়।”

“আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে উনার মুখের ক্ষতস্থানগুলোতে জমাট বেঁধে থাকা রক্ত মুছিয়ে দিয়।তারপর ওষুধ লাগাতে নিলে উনি ব্যাথায় আহ্ করে উঠে।”
—“নির্দয়, পাষাণ, বেঈমান যেই ভাইকে এতোগুলো বছর ধরে ছেলের মতো করে মানুষ করললেন আজ সেই ভাই আপনাকে মেরেছে।ওর হাত খসে পরবে।”
—“কি বলছো ইশানি এসব?”
—“তো কি বলবো? যেতে তো দিলেন না।এবার আমি যা ইচ্ছা তাই এখানে বসেই বলবো একটা কথাও বলবেন না।”

“উনার হাত আমার কাঁধে উপরে পেঁচিয়ে বলি,” —“রুমে চলুন।এখন একটু ঘুমাবেন।আর কখনো যদি বাড়িতে একটা কাজও করতে দেখেছি আপনাকে তো আমার একদিন কি আপনার একদিন!”
—“কিন্তু ইশানি…”
—“একটা কথাও বলবেন না।সবকাজ এখন থেকে আমি করবো।”

চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *