অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 05

—এই এখন আমরা কোথায় যাবো?
“উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমার চোখে চোখ রেখে বলল,”
—ভরসা আছে না আমার উপর?
—হুমমম।
—তাহলে নিশ্চিন্তে থাকো।
“আমাকে বুকে জড়িয়ে উনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।আমার খুব খারাপ লাগছিলো।এই একটা দিনে অনেক স্মৃতি জমা করেছি এই বাড়িতে।কখনো ভাবি’নি বাড়িটা থেকে এভাবে বেড়িয়ে আসবো।রাস্তায় বের হতেই দেখি কাঠ পুরানো রোদ্দুর।এই রোদ্দুরে কোথায় যাবো? উনি মনে হয় আমার মনের কথা পরে নিয়েছে।”

—ইশানি এতো ভেবো না থাকার যায়গা আছে।
—থাকার যায়গা আছে মানে?

“উনি আমার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পরে।আর আমাকেও ডাকে।”
“আমি রিক্সাতে উঠলাম কিন্তু বুঝছি না উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।”
—কোথায় যাচ্ছি আমরা?
“উনি আমাকে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো।আর বলল,”
—গেলেই দেখতে পারবে।

“রিক্সাটা একটা বিশাল বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।উনি আমার হাত ধরে রিক্সা থেকে নামায়।তারপর রিক্সাওয়ালাকে ভাড়াটা মিটিয়ে ব্যাগগুলো উঠিয়ে বাড়িটার ভেতরে যেতে লাগে।আমিও উনার পেছনে পেছনে যায়।বাড়ির দারোয়ান উনাকে সালাম দিয়ে মেইন গেট’টা খুলে দেয় আর ভেতরের দরজার চাবিটা উনাকে দিয়ে দেয়।”
—আমি বুঝতে পারছি না কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে আপনি?
“উনি মুচকি হেসে বাড়ির ভেতরের দরজাটা খুলতে খুলতে বলে,”
—তোমার বাড়িতে।
—মানে?
—এই বাড়িটা বাবা আমার হবু বউয়ের নামে লিখে রেখে গিয়েছিলো।
—কি বলছেন?
—হুমমমম।শুধু তোমার নয় তপু, নিশি এদের সকলের জন্যই এমন একটা করে বাড়ি বাবা গোপনে বানিয়ে রেখে গেছে।এমনকি তপুর হবু বউয়ের নামেও।
—এটা আপনার মা, ভাই-বোন জানে না?
—নাহ! এটা শুধু আমি আর বাবা জানি।আর আজ তুমি জানলে।
—কিন্তু গোপনে বাড়ি বানানোর কি দরকার ছিলো?
—দরকারটা আজ কাজে এসেছে ইশানি।বাবা আমাকে বলেছিলো কথাটা কাউকে না বলতে।তাই বলি নি।তাছাড়াও বাবা জানতো মায়ের মন কেমন।আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলো কিন্তু আমিই বাবাকে বিশ্বাস করি নি।তারপর আমাদের সবাইকে এক রাখতে বাবা বলেছিলো তার সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়েছে।কিন্তু সত্য এটাই সম্পত্তির ভাগ সমান ভাবে বাবা আমাদের তিনজনকে দিয়ে গেছে।
—হুমমমম বুঝলাম।শ্বশুড় আব্বার বুদ্ধি আছে বুঝতে হবে।
—হুমমমম। এবার চলো তো বাড়ির ভেতরে।

“বাড়ির ভেতরটা দেখে মনেই হচ্ছে না এবাড়িতে কেউ থাকে না।”
—আচ্ছা বাড়িটা এতো চকচকে কেন?
—কারণ এবাড়িতে মাঝে মাঝে আমি আসি আর কাজের লোক আছে তারা প্রতিদিন এসে সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়ে চলে যায়।শুধু এবার একটা রান্না করার মানুষ দরকার।তোমাকে দিয়ে তো আর রান্না করাতে পারি না।
—ধূর কি যে বলেন না আপনি।বিয়ের আগে কতো রান্না করেছি আর আজ রান্না করে স্বামীকে খাওয়াতে পারবো না?
—তবুও আমার বউকে দিয়ে আমি কখনো রান্না করাবো না।এতো সুন্দর আর নরম তুলতুলে হাত’ দুটো কি কাজ করার জন্য নাকি? এটা তো আমার বউয়ের হাত আমি সারা জীবন যত্নে রাখবে।
—থাক আর কিছু বলতে হবে না।আপনার কথা শুনে এখন আমার হাসি পাচ্ছে।
—হুমমমম।তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে আনছি।

“ওবাড়িতে শ্বাশুড়ি আম্মা আমাদের চলে আসার খুশিতে পার্টি দিয়েছে।তার বয়সি আরও কয়েকজন মুরব্বিদের নিয়ে। বাড়িতে ডিজে গান চলছে।সে নিশির একটা ড্রেস পরে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে পার্টিতে এসে দাড়িয়েছে।আর সকলে তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।তিনি হেলে দুলে হাটতে গিয়ে উঁচু হিলটাতে বেঁধে ধড়াম দিয়ে নিচে পরে যায়। আবার ওঠে একটা অট্টহাসি দিয়ে হাই লেডিস বলতে বলতে এগিয়ে আসে।তার সাজ পোশাক দেখে পার্টির সকলে হাসছে।কিন্তু সেদিকে তার নজর নেই।নিশি বলছে,”
—মা তোমাকে যা ঝাক্কাস লাগছে না দেখতে। একদম আমার ছোট বোন।দেখও না দেখও সকলে কিভাবে হিংসাই হাসছে।
“তিনি ভাব দেখিয়ে সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে নেয় আর বলে,”
—আমি জানি সবাই আমাকে দেখে হিংসা হয়।কারণ আমার মতোন এতো মর্ডাণ এখানে কেউ নেই।তো যা বলছিলাম আজকের পার্টি’টা দিয়েছি কারণ আমি আমার সতিনের ছেলে আর তার বউকে তারিয়ে দিয়েছি।সবাই হাততালি দাও।

“নিশি জোড়ে জোড়ে হাতহাতি বাজাতে থাকে।অন্যরা চুপ হয়ে আছে।শ্বাশুড়ি আম্মা নিশির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,”
—এই নিশি কেউ হাতহাতি বাজায় না কেন? আমার তো ইনসাল্ট বোধ হচ্ছে।
—দাড়াও মা বলছি।
কাকি আম্মা, চাচি আম্মা আপনারাও বাজান।
সবার হাত উঁচু করে দিয়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে, হাততালি।

চলবে,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *