অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 02

“আমার শ্বাশুড়ি আম্মা কান ধরে নিশি আর তপুর দু’মাথা এক করে দেয় এক টাক।”
“দু’জনে ভ্যাভ্যা করে কাঁদতে থাকে। যা দেখে শ্বাশুড়ি আম্মা আবার ওদেরকে ঝাড়ি দেয়।”
—হারামির দল থাপ্পড় খাইছোস তোরা?
তার ঝাড়ি খেয়ে ওরা চুপ হয়ে যায়।

“এদিকে উনি আমাকে শেখাচ্ছেন তার মাকে কিভাবে সম্মান দিবো।আমি কিছু বললেও শুনতে চাইছে না।তাই এক প্রকার রাগ করে তাকে বোঝানো ছেড়ে দিলাম।তাকে বললাম রুম থেকে বেড়িয়ে যান।আর সে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে দেখে বিছানা থেকে বালিশটা উঠিয়ে চলে যেতে লাগলো।”
—এতো রাতে বালিশটা নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
—কেন আপনিই তো বললেন রুম থেকে চলে যেতে।
—হ হ ভালোই বুদ্ধি এটেছেন আপনি।
—মানে?
—মানে বুঝছেন না? আপনি চলে যান আর আপনার মা এসে চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলুক তার ছেলেকে আমি রুম থেকে বের করে দিয়েছি।
—তাহলে যেতে বললেন যে!
—হ্যাঁ, বলেছি।শাড়িটা পড়বো তায়।
—ওহহ ঠিক আছে।আমি বাইরে যাচ্ছি। আপনার শাড়ি পরা হলে আমাকে ডাকবেন।

“উনি রুমের বাইরে গেলে, আমি শাড়িটা কোনো রকমে শরীরের সাথে আঁটসাঁট করে পেঁচিয়ে উনাকে ডাকি।”
—ভেতরে আসুন! আমার শাড়ি পরা হয়ে গেছে।

“উনি ভিতরে আসে আর আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।”
“উনার এমন চোখের চাউনি আমার মেজাজটাকে খারাপ করে দিচ্ছে। আমি এগিয়ে কিছু বলতে যাবো তখন শাড়ির সাথে বেঁধে ধপাস করে ফ্লোরে পরে যায়।উনি এগিয়ে এসে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আমাকে উঠার জন্য।আমি হাতটা না ধরেই উঠে দাড়াতে যায় আর শাড়িতে বেঁধে আবার পরে যেতে লাগি।সেটা দেখে উনি ধরে বসে।আমার কোমড়ে জড়িয়ে ধরে বলে,”
—এটা কিভাবে শাড়ি পড়েছেন আপনি?
“তখন কাছ থেকে উনি আমার কানের দিকে লক্ষ্য করে।দেখে কান থেকে রক্ত ঝরছে।উনি আমার কানে হাত দিতেই আমি ব্যাথায় আহ্ করে উঠি।তখন উনি আমার কাছে জানতে চায়, এটা কিভাবে হলো?”

“উনার এমন প্রশ্নে আমাকে শাশুড়ী আম্মার সেই ভয়ংকর রূপটা মনে করিয়ে দিল।সঙ্গে সঙ্গে উনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলাম।”
“আমার এমন আচারণে উনি হয়তো অস্বস্থিবোধ করলো।কিন্তু কিছুই বললো না।”

“শাড়িটার জন্য আমি নরতে, চলতেও পারছি না।হাটতে গেলেই বেঁধে বেঁধে পরে যাচ্ছি।উনি চোখ তুলে বললো ইশানি আমি কি আপনাকে শাড়ি পড়ানো শিখিয়ে দেবো?”
—মানে? আপনি কি বোঝাতে চান, আমি শাড়ি পরতে পারি না?
—না আমি সেটা বলিনি।শুধু বলেছি শাড়ি পরানো শিখিয়ে দিবো।
—আবার সেই এক কথা বললেন।আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।
—আচ্ছা থাক! আর কিছু বলছি না।আপনি এভাবেই থাকুন।
—মানে কি? আমি একটা বিপদে পরেছি আর আপনি আমাকে এভাবে ফেলে রাখতে চান? এই অবস্থায় আমি মানুষের সামনে যাবো? আর ধপাস ধপাস করে অন্য মানুষের গায়ে পরবো ভালো লাগবে আপনার সেটা দেখতে?
—সেজন্যই তো বলছিলাম আসুন আমি আপনাকে শাড়ি পড়ানো শিখিয়ে দিই?
—কিসের জন্য? আমি আপনার হেল্প কেন নিবো?
—ঠিক আছে! আমার ভুল হয়ে গেছে আপনাকে কিছু বলা। আপনার যা ভালো মনে হয় আপনি তাই করেন।
“কথাটা বলে উনি চলে যেতে লাগে আমি ইচ্ছা করে ধপাস করে উনাকে নিয়ে ফ্লোরে পরে যায়।
উনি উঠতে গেলেও উঠতে দিই না।”
—আমাকে আপনি শাড়ি পরানো শিখিয়ে দিতে চেয়েছেন না, চলে যাচ্ছেন কেন?

“আমি উঠে দাড়িয়ে শাড়িটা টেনে খুলে ফেলি।আর বলি,”
—এবার শিখিয়ে দিন।

“উনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে উঠে দাড়িয়ে আমাকে শাড়ি পড়াতে থাকে।আর বলে দেয় কিভাবে পরতে হবে।শাড়ির কুচিগুলো সুন্দর করে ভাজ করে গুজার জন্য নাভির কাছে আনতেই বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজে থেমে যায়। কুচিগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গুজে নিতে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।”

“কিছুক্ষণ পর শাড়িটা ঠিক করে নিয়ে আমি বাইরে বেড়িয়ে দেখি আমার শ্বাশুড়ি আম্মা নিচে বসে চিৎকার করে করে কাঁদছে।”
—আল্লাহ গো আমার ঠ্যাং ভেঙে গেলো গো।ও তপুরে, ও নিশিরে তোদের মা আর বাঁচবে না।তোরা ভালো থাকিস।

“উনি শ্বাশুড়ি আম্মাকে শান্তনা দিচ্ছে।”
—কিসব বলছো মা? তোমার কিচ্ছু হবে না।চলো তোমাকে নিয়ে হসপিটালে যায়।

নিশি আর তপু ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠে বলে,
—নাহ নাহ ভাইয়া মাকে হসপিটালে নিও না।মায়ের অনেক ইচ্ছা মৃত্যু হলে এবাড়িতেই যেন হয়।

উনি একটা ঝাড়ি দিয়ে বলে,
—থাপপপপ! পা ভাঙলে কেউ মরে না।এসব কথা বলিস না মায়ের সামনে।

“শ্বাশুড়ি আম্মা আরো জোড়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে।তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—নাহ নাহ বাবা আমার সত্যি মনে হচ্ছে মরে যাবো।আমাকে তোরা হসপিটালে নিস না।শুধু আমার একটা আবদার রাখবি?
উনি বলে,
—বলো মা! কি আবদার?
—আজ সারারাত তোরা তিন ভাই বোন আমার সাথে কাটাবি?

“কথাটা শুনে উনি আমার মুখের দিকে তাকায়।আর চোখের ইশারায় বোঝায় তুমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরও।”

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *