অন্তরালে তুমি আমি

অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 16

“জলির জ্ঞান ফিরতেই আবার ছটফট করতে শুরু করে।চিৎকার করে আর আদিকে ডাকে।গাড়ির ভেতরে জলির মা জলির হাতটা চেপে ধরে রেখেছে আর বলছে একটু ধৈর্য ধরতে।খুব অল্প সময়ের মধ্য আমরা হসপিটালে চলে আসবো।এদিকে জলির অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে।জলির বাবা খুব ভয়ে ভয়ে আছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে তোর কিছু হবে না মা।কিছু হবে না।জলি বাবাকে ধরে বলে তুমি এসেছো বাবা তবে অনেক দেরি ফেলেছো।আমি হয়তো আর বাঁচবো না।আমি মারা গেলে আমার আদির সন্তানকে দেখো।জলির বাবা জলির মুখটা চেপে ধরে বলে তোর কিছু হবে না।কিচ্ছু না।”

“এদিকে আদি বসা ছেড়ে চোখ মুখ মুছে উঠে দাড়ায় আর এক মুহূর্তও দেরি করা যাবে না।গাড়িতে বসে পরে আদি আর খুব দ্রুত গতিতে তারাহুরো করে গাড়ি ড্রাইভ করে।আদির পিঁছনে পিঁছনে চারটা গাড়িতে শুধু ওর গার্ডরা আসে।”

“রাস্তায় অনেক জ্যাম আদি যেই রাস্তা দিয়ে আসছে পুলিশ আগে থেকেই সেই রাস্তা ফাঁকা করে দিচ্ছে। আর এদিকে জলিদের গাড়ি জ্যামে আটকে আছে। জ্যাম দেখে গাড়িটা ঘুরিয়ে আবির অন্য রাস্তা নিতে যায় আর ঠিক তখনই জলির চিৎকার আরও বেড়ে ওঠে।এদিকে পুলিশও আবিরের গাড়িটা আটকে সাইড করতে বলেছে এই রাস্তা দিয়ে আদি যাবে বলে।আবির পুলিশকে বোঝানোর চেস্টা করে কিন্তু পুলিশ কোনো মতে আবিরের কথা শোনে না।উপায় না পেয়ে আবির গাড়ি থেকে নেমে যায় আর আসেপাশের কিছু মহিলাকে ডেকে আনে।তারা এসে জলির অবস্থা দেখে জলিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাশের একটা ঝোঁপের কাছে নিয়ে যায়।আর জলির চারপাশে শাড়ি দিয়ে ঘিরে দেয়। দূর থেকে জলির বাবা আর আবিরের চিন্তা হতে থাকে।জলির মা জলির কাছেই আছে।সে জলিকে আর একটু ধৈর্য ধরতে বলছে।হঠাৎ করে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।বাচ্চার কান্নার আওয়াজ হতেই জলি শান্ত হয়ে যায়। আবির আর জলির বাবার চোখে খুশির বন্যা বয়।কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ টেকে না।মিনিট কয়েক পর জলি আবার চিৎকার শুরু করে দেয়।আর আবার আবিরের ও জলির বাবার চিন্তা শুরু হয়।ওদিকে কি হচ্ছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না। জলির মা কেন এখনো আসছে না? আর জলি কেন আবার চিৎকার করছে? এরই মধ্যে আবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ তাদের কানে আসে।জলির ওখান থেকে একজন মহিলা বলে ওঠে জমজ বাচ্চা।কথাটা শুনে জলির বাবা আর আবির আবার খুশি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর জলি আবার চিৎকার করে।এবার জলির বাবা আর আবির আবার চিন্তায় পরে যায় জমজ বাচ্চা হবার পর জলি আবার কেন চিৎকার করছে? তাহলে এবার জলির কি হবে? জলির বাবা চিন্তায় কেঁদে দেয়। আবির জলির বাবাকে শান্তণা দিতে থাকে।এরই মধ্যে আবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে থেমে যায়।জলির চিৎকারও এখন আর নেই।কিছুক্ষণ পরিবেশ নিস্তব্ধ।তারপর জলির মা ঝোপের বাইরে বেড়িয়ে আসে।আর মুখটা কাল করে জলির বাবার সামনে এসে দাড়ায়। জলির বাবা সেটা দেখে জলির মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। আর বলে আমার জলি আর নেই তাই না? কথাটা শুনে জলির মা জলির বাবাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় এক ঝাড়ি।জলির বাবা ভাবে জলির মা এখনো তার প্রতি রেগে আছে।জলিকে তারিয়ে দিয়ে যে ভুল করেছে তার জন্য জলির মৃত্যুর কারণ হয়তো তাকে ভাববে।তাই হাত জোড় করে জলির বাবা জলির মায়ের কাছে বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য মেয়েটা আর এই পৃথিবীতে নেই। কথাটা শুনে জলির মা আবার ঝাড়ি দিয়ে জলির বাবাকে একদম নিশ্চুপ করিয়ে দেয়। তারপর বলে প্রথমে দুইটা ছেলে তারপর একটা মেয়ে হয়েছে আর তোমার মেয়েও ভালো আছে।কথাটা শুনে জলির বাবা আর আবির একে অপরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।”

“এদিকে রাস্তার সাইডে সাড়ি সাড়ি গাড়ি দাড় করিয়ে পুলিশ আদির যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিয়েছে।এতো গাড়ির ভিরে আদি আর আবিরের গাড়িটা পাশ ফিরে দেখে না।গাড়িটার পাশ কেটে আদি চলে যায় হসপিটালে।সেখানে গিয়ে চিৎকার করে ডাক্তার নার্স সবাইকে ডাকে।আদিকে দেখে কিছু নার্স, হসপিটালের প্রেশেন্টদের বাড়ির লোক ছুটে আসে।আর সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা গা ঘেঁষে অটোগ্রাফ নিতে চায়। আদির একটা ইশারায় তার গার্ডগুলো সবাইকে সরিয়ে দেয় তারপর ডাক্তারের সাথে রিসিপশনে গিয়ে জলির ছবি দেখিয়ে খোঁজ করে।আর জানতে পারে নাহ এই হসপিটালে এই প্রেশেন্ট আসে নি।কথাটা শুনে আদি হসপিটালের থেকে বেড়িয়ে আসতে যায়। এমন সময় একজন ডাক্তার আদিকে জিজ্ঞাসা করে।ছবির মহিলাটি কে? তখন উত্তরে আদি বলে, আমার সন্তানের মা।”

“আদি ওই হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে এসে অন্য হসপিটালে যায়। একটার পর একটা শহরের সব হসপিটালে গিয়ে আদি জলিকে খোঁজে কিন্তু কোনো হসপিটালেই জলিকে খুঁজে পাই না।আদি এবার ক্লান্ত হয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে।আর সেখানে এসে তার দাড়োয়ানের কাছে জানতে পারে জলি প্রায় এবাড়িতে আসতো আর দিনে তিন-চার বার ফোন করে শুনতো আদির কোনো খবর আছে কিনা।কথাটা শুনে আদি এবার অনেক ভেঙে পরে।আর ভাবে, এতোটা ভালোবাসে জলি আমাকে আর আমি এতোগুলো দিন ওকে ভুল বুঝলাম? ওকে এতো মানুষের ভিরে অপমান করলাম? আমি আমার সন্তানকে আমার জলিকে অস্বীকার করেছি।নাহ নাহ আমি আমার জলিকে আর কস্ট পেতে দেবো না।ও’কে ফিরিয়ে আনবো।কিন্তু কোথায় পাবো ও’কে?”

চলবে,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *