অদ্ভুত ভালোবাসা ! পর্ব- ১৪
গল্প বিলাসী ( Nishe)
।
সেদিন থেকে খুজে চলছে নিশিককে কিন্তু কোথাও পায়নি আজও
খুঁজে চলছে কিন্তু হতাশা ছাড়া আর কিছুই
তার ভাগ্যে মেলেনি
।
অন্যদিকে নিশি রাজশাহী তে গিয়ে আর ফিরে আসতে চায়না
সব ভূলে থাকার জন্য রাজশাহীতেই থেকে যায়
।
সেখানে আন্টির পরিচিতো এক ভাইয়ের অফিসে পি এ পদে চাকরী
খুঁজে নিলো
।
শুধুমাএ সবার স্মৃতি গুলো ভূলে থাকার জন্য। নীলের সাথে সম্পর্কটা
বেশি সময়ের না হলেই এই ক্ষুদ্র সময়ে খুব ভালোবেসে
ফেলেছিলো তাকে
।
একটু একা হলেই যে স্মৃতি গুলো তাকে তাড়া করে বেড়ায়
।
নিজের চাইতেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলো নীলকে
আর তার বিনিময়ে নীল তাকে এক বুক হতাশা।
নির্ঘুম রাত উপহার দিলো।
।
কেমন আছে নীল? হয়তো অদিতিকে নিয়ে সুখেই আছে
।
হয়তো ভূলে গেছে নিশি নামের কেউ একসময় তার জীবনে
ছিলো আর আমি হাজার চেষ্টা করেও নীলকে ভূলতে পারছিনা
।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটা বছর
।
দুজনেই নির্ঘুম কর রাত কাটিয়েছে তার হিসেব নেই।
নীল ক্লান্ত নিশিকে খুঁজতে খুঁজতে আর নিশি ক্লান্ত নীলের দেয়া
ভালোবাসার প্রতিটা মুহুর্ত ভূলতে
।
একদিন বিকেল বেলা
।
নিশি! নিশি!
।
জ্বি আন্টি বলো।
।
কোথায় তুই? আমি তোকে খুজছি।
।
এইতো বলো।
।
চলনা আজ চলে যাই আমরা
।
কিন্তু আন্টি বিয়ে তো পরশু দিন আমরা কাল যাই?
আর আজ অফিস করে ছুটি নিয়ে আসবো কেমন?
।
তাহলে আজ বিকালে যাই?
।
আজই যেতে হবে?
।
হুম। প্লিজ না করিস না?
।
ওকে যাবো। এবার তো খুশি?
।
হুম খুব খুশি
।
।
একটু হেসে আন্টিকে জড়িয়ে ধরলাম ( এই আন্টিরর সাথে যদি ঐদিন
দেখা না হতো আজ আমার কি হতো? কোথায় থাকতাম আমি? কি করে
বাঁচতাম মনে হতেই চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করলো)
।
আচ্ছা দেখি
এই তুই কাঁদছিস কেনো?
।
কই নাতো। আচ্ছা আমি যাচ্ছি আন্টি দেরি হয়ে যাচ্ছে বলেই চলে এলাম
।
অফিসে
।
আগে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা করে কেভিনে এসে বসলাম
।
আমার তেমন কাজ নেই আজ আমি আগেই শেষ করে রেখেছি
তারপরও কম্পিউটারে মেইল গুলো চেক করছিলাম তখনি কল এলো
।
হ্যালো নিশি স্পিকিং
।
ইয়াহ স্যার। আই এম কামিং
।
মে আই কাম ইন স্যার?
।
ইয়েস কামিং
।
আপা ফোন করেছিলো তুমি এখন আসতে পারো আর নিজের মতো
ছুটি কাটাতে পারো
।
থ্যাংকস স্যার
।
যাক বাবা এখন আবার বৃষ্টি এলো কোথা থেকে ছাতাটাও নেই
।
অনেকক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছি বৃষ্টি থামার কোনো নাম ই নেই কি
করবো এখন? আন্টি ও যে অপেক্ষা করবে
।
এতোদূর তো হেটেও যাওয়া যাবেনা কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না
।
অবশেষে ভিজেই বের হয়ে গেলাম
।
আরে পুরাই ভিজে যাচ্ছিলাম
থাক আন্টিরর জন্য এইটুকু করতেই পারি তা বেশি কিছু না।।
।
আহ বৃষ্টি নামার আর সময় পেলনা আর সিয়াম টাও বিয়ে করার সময় পেলোনা
এই বৃষ্টিরর দিনে তাও আবার রাজশাহীতে
।
বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না এসেও পারলাম না
।
সামনে তাকাতে দেখি একটা মেয়ে হাত নেড়ে গাড়ি থামাতে বলছে
।
আমাকে একটু লিফট দিবেন প্লিজ সামনের গলিতেই নেমে যাবো
।
না তাকিয়েই বললাম ওঠে পরুন
।
আমি এইখানেই নামব
নেমেই ওনাকে থ্যাংকস বলার জন্য সামনের দিকে গেলাম।
থ্যাংকস বলার পর লোকটির দিকে তাকালাম
।
তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে মনেহলো আমার পৃথিবীটা একদিকে আর
আমি একদিকে হয়ে গেছি
।
এই আমি কাকে দেখছি নীল!
কিভাবে সম্ভব?
নীল আমার দিকে তাকানোর আগেই চলে আসলাম
।
মেয়েটা থ্যাংকস বলেই চলে গেলো কিন্তু ভয়েসটা খুব পরিচিতো
মনে হলো তাকাতেই দেখি নেই মেয়েটি
।
তারপর চলে গেলাম সিয়ামের বাসায়।
।
বিকেলবেলা
।
রিমি : কিরে এতোক্ষনে তোর সময় হলো?
।
সরি আপু একটু দেরি হয়ে গেছে
।
আচ্ছা চল আগে ফ্রেশ হয়ে নিবি তারপর একটু বের হবো তোকে
নিয়ে কেমন? তোর ভাইয়ার সাথে একটু কাজ আছে
।
ভাইয়ার সাথে কাজ আমি গিয়ে কি করবো বলতো?
আমার বাবা কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কোনো ইচ্ছা নাই
।
খুব পেকে গেছিস তাই না?
।
হি হি হি
(এই হচ্ছে রিমি আপু যার বিয়েতে আসার জন্য আন্টি বলেছিলো।
আন্টিরর ভাসুরের মেয়ে খুব মিশুক কিছুদিনের পরিচয়ে এতো আপন
হয়ে গেছে বলার মতো ভাষা আমার নাই)
।
সিয়াম : কিরে তোর হলো?
।
নাহ আর একটু
।
সালা মেয়ে হয়ে গেলি নাকি?
।
বের হতে হতে কি বললি আমি মেয়ে হয়ে গেছি?
।
এতো সময় নিয়ে গোসল করলে মেয়ে বলবো নাতো কি
বলবো
।
আচ্ছা দেরি করিস না প্লিজ চল রিমিরা ঐখানে অপেক্ষা করছে
।
আমি গিয়ে কি করবো বল তাছাড়া অনেক জার্নি করেছি একটু রেস্ট নেয়া
দরকার
।
আরে চলতো আমার একটা শালিকা আসবে যা সুন্দর তোর সাথে ফিক্সড
করে দিবো
।
আমার তো সেই আগেই ফিক্সড হয়ে আছে
।
নিশির সাথে?
।
নিশি নামটা শুনে সিয়ামের দিকে তাকালাম সেতো নিশির কথা জানার কথা না?
।
মানে? কোন নিশি?
।
আরে আমার শালিকার নাম
।
ওহ তাই বল। আমি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু?
।
কেনো সন্ধেহ আছে তোর?
।
ক্ষিদা লাগছে বেটা
।
আরে রেষ্টুরেন্ট এ খেয়েনিবো চলতো
।
ইচ্ছা না থাকা সত্যেও যেতে হলো
।
আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো রিমাপু আমি কিন্তু চলে যাবো
।
আর একটু প্লিজ
।
আর একটু একটু বলেতো ২ঘন্টা
।
জানিস তোর ভাইয়ার একটা বন্ধু ও আসছে
।
তো? আমি কি ওনাকে মাথায় নিয়ে নাচবো?
।
করতেই পারিস নো প্রবলেম? আমি সেটেল করে দিবো
।
রিমাপু এবার কিন্তু আমি সত্যি রেগে যাচ্চি
।
আচ্ছা আচ্ছা সরি বাবা আর কিচ্ছু বলছিনা
।
নিশি? তোর ভাইয়ার বন্ধু টানা হেব্বি দেখতে সিয়ামের আগে যদি
দেখতাম না তাকেই বলে দিতাম
।
ভাইয়া আপনি এই লুচু মাইয়ারে বিয়া কইরেন না এই মাইয়া আপনারে ছ্যাকা দিয়া
ব্যাকা কইরা দিবো ( শুধুই মোবাইলটা কানে দিয়ে)
।
ঐ তুই থামবি হ্যা?
কি বলছিস এইগুলা?
আমিতো তোর জন্য বলছিলাম
(একদম নরম সুরে)
।
এহ আমার জন্য।
।
সত্যি বলছি নিশি নীল অনেক হ্যান্ডসাম ছেলে।
একবার দেখলে আমি সিয়র প্রেমে পরে যাবি
।
নামটা শুনেই শরীরটা কেমন যেনো কেঁপে ওঠলো
।
রিমাপু নীলটা কে?
।
সিয়ামের ফ্রেন্ড
।
ওহ
প্রেম ( একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)
।
কি ব্যাপার আমি কি চলে যাবো আর কতক্ষন থাকবো?
।
এইতো চলে আসছি জান
।
ওইতো ভাইয়া
পাশের মানুষের দিকে তাকাতেই চোখজোড়া কপালে ওঠে গেলো
।
হ্যা এই সেই নীল যার ভালোবাসায় একসময় নিশি মোহিতো ছিলো
।
আমাকে যেভাবেই হোক এইখান থেকে সরে যেতে হবে
নীলের সাথে কিছুতেই দেখা করা যাবেনা
।
রিমাপু তোমরা কথা বলো আমি আসছি বলেই যেতে নিলাম
।
এই নিশি কোথায় যাচ্ছো?
।
( আল্লাহ মাটি ফাক করে দাও ঢুকে যাই)
এইতো ভাইয়া এইখানে একটু কাজ আছে বলেই চলে যাচ্ছিলাম
।
আরে কাজ পরে চলো আগে
আমরা একজায়গায় যাবো আজকে
।
ও মাই গড! নাহ কিছুতেই যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না
।
ভাইয়া আপনারা যান আমি গিয়ে কি করবো বলেন আমি বরং বাসায় যাই আমার
অনেক কাজ আছে
।
আরে সিয়াম এতো বলার কি আছে? যে যেতে চায়না তাকে জোড়
করছিস কেনো?
তোরা থাক আমি গেলাম
।
আরে কোথায় যাচ্ছিস? আর কি বলছিস নীল? আমার একমাত্র শালিকা বলে
কথা আমার সাথেতো যেতেই হবে
এই রিমি তুমি নিশিকে নিয়ে গাড়িতে বসো আমি আসছি
।
এহ কি ভাব যেনো নাইকা বলেই গিয়ে গাড়িতে বসলাম
।
ছোটবেলা থেকে আমার ড্রাইভিং করতে খুব ভালোলাগে তাই আমিই
ড্রাইভিং করছি আর নিশি নামের মেয়েটা আমার পাশেই বসেছে সিয়াম আর
রিমি পিছনে
।
এখন পর্যন্ত তাকিয়ে ও দেখার প্রয়োজন মনে করে তাকিয়ে
দেখেনি নীল আর দেখবেই বা কেনো তার এই মনের রাজত্বে
তো শুধু একজনের বসবাস
।
নিশি কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি তোমাকে কি আমি আর কখনো
খুজে পাবোনা ভাবছে আর ড্রাইভিং করছে নীল
।
What The hell
ভালো করে ড্রাইভিং করতে পারেন না আবার আসছেন ড্রাইভ করতে
চেঁচিয়ে বলে ওঠলো
।
ভাবনার জগতে এতোটাই বিভোর হয়ে গিয়েছিলো নীল সে যে
ড্রাইভ করেছিলো তাই ভূলে গেছিলো একটুর জন্য বেচে গেছে
।
নিশির চিল্লানো শুনে নীল তাকালো
।
এই আমি কাকে দেখছি
নিশি! আমার সাথে বসা
আমি কি স্বপ্নে দেখছি নাকি?
নাহ চোখ মুছে আবার তাকালাম
নিশিইতো
।
যদি তখন আমার কথা শুনে সত্যিই চলে যেতো আমিতো আমার নিশিকে
কিছুতেই এখন পেতাম না থ্যাংকস গড
।
কোনো কথা না বলে ড্রাইভ এ মনযোগী হলাম
।
এতো খুঁজে তোমাকে পাইনি
আর আজ
এতো পাশে থাকার পরও আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি অনুভব করতে
পারিনি
।
সিয়ামের নির্ধারিত জায়গায় আসার পর গাড়ি থেকে নামলাম
।
আমি বার বার নিশির দিকে তাকাচ্ছি।
কিন্তু নিশি একবারো আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো না নিশি কি আমাকে
চিনতে পারেনি?
।
এমন ওতো হতে পারে চিনেও অচেনার ভাব ধরেছে
।
সিয়াম আর রিমি কথা বলছে নিশিকে একটু সাইডে দাড়িয়ে
থাকতে দেখে আমি গিয়ে পাশে দাঁড়ালাম
।
কেমন আছো নিশি?
।
মৃদু হাসি দিয়ে বললাম হ্যা ভালো আছি আপনি?
।
হুম ভালো
।
তারপর দুজনেই চুপ
।
খুব অভিমান করে আছো আমার উপর তাইনা?
।
সরি? আমাকে বলছেন?
।
হ্যা তোমাকেই আমি খুব সরি নিশি আমি কিছুই জানতাম না
।
আপনার ওপর অভিমান?
কোন অধিকারে? কে হন আপনি আমার?
।
আপন মানুষের উপর অভিমান করা যায় অন্য কারোর প্রতি নয়
।
আমি জানি নিশি আমি তোমাকে কি পরিমান কষ্ট দিয়েছি আমি খুব খুব সরি
।
মি, নীল চৌধুরী
কষ্টটা যখন আকাশ পরিমান সরিটা তখন বড্ড বেমানান বলেই গিয়ে গাড়িতে
বসে পরলাম
।
নিশি আমার কথাটা একটু শুনো প্লিজ
।
continue…..
.বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!